ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত। পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুরে চাষিরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনের টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক জমিতে। পেঁয়াজ তোলার প্রস্তুতিকালে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে এখন মাথায় হাত চাষিদের।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ২ দিনের টানা বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত
চাষিরা বলেছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ খেত থেকে চাষিরা আগামী সাত দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু বৃষ্টির পানি খেতে জমে তারা ফসলের মাঠে নামতে পারছেন না।
শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছাড়াও রসুন,আলু ও সরিষা খেত তলিয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু খেত ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু দিকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন,‘দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে টানা বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের অন্য ফসলের প্রণোদনা দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার।’
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেশি। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতে চাষিদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে। প্রতিটি মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার জন্য আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চাষি সুরত খান, সালাউদ্দিন মোল্ল্যাসহ অনেকেই বলেন, ‘খেতে পানি জমে গেছে। চলতি মৌসুমে মাঠে যে ফসল আছে সবই ক্ষতির মধ্যে। কীভাবে চলব, আর পুঁজিও বা কীভাবে উঠবে সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
নগরকান্দা উপজেলার আশফরদী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রোকন উদ্দীন মাতুব্বর বলেন,‘আমি প্রতি বছর ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করি। তাই এবছর সেই জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ১৪ কেজি দানা কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বৃষ্টিতে সব শেষ। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হয়েছে তাই সরকারের কাছে আমাদের বীজ কিনে দেয়ার দাবি জানাই।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন ইয়ামিন বলেন, ‘নগরকান্দা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে আমাদের উপ সহকারীরা মাঠে আছেন। আমরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশা করছি সরকার এই চাষিদের বিষয়ে আন্তরিক হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা চুড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানার পর তাদের আর্থিক সহয়তাসহ সরকারি অন্যান্য সহযোগিতা করব।’