চার মাস ১২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার ( ৩১আগস্ট ) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।

গত ১৯ জুলাই কাপ্তাই হ্রদে প্রথম দফার তিন মাসের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। তবে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দ্বিতীয় মেয়াদে আরও এক মাস ১২ দিন নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জারি রাখা হয়।

কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা এবং অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে ওঠার জন্য প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এবছর কম বৃষ্টি হওয়ায় এবং ভারতের মিজোরাম থেকে পানি না আসায় হ্রদের পানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) তথ্য অনুযায়ী, হ্রদে ১০৫ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে ওঠার এবং মা মাছ প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। তবে বর্ষার শুরুতে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোনা মাছ বেড়ে উঠতে পারেনি। একারণে জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে।

অন্য বছরের থেকে প্রায় এক মাস বেশি মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জেলেদের। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ায় স্বস্তি ফিরছে তাদের মাঝে।

পুরান জেলে পাড়ার বাসিন্দা সজল দাশ বলেন, তিন মাস  ভিজিএফ-এর ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই মাস চাল পেয়েছি। আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। এখন মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার খবরে আমরা খুবই খুশি।

আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে ২০ এপ্রিল থেকে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ

মাছ ধরার আগে জেলে পল্লিতে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। ইউএনবির স্থানীয় প্রতিনিধি জেলে পল্লি ঘুরে দেখেন, জেলেরা তাদের নৌকার আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বেঁধে রেখেছে হ্রদের পাড়ে। বেঁধে রাখা নৌকায় রং লাগানোর কাজে ব্যস্ত অনেকেই। পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে নারীরাও। পুরাতন জাল ঠিক করতে এবং নতুন জাল তৈরি করতে ব্যস্ত তারা।

জেলে ও ব্যবসায়ীদের আশা, এবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে তাদের জালে। আর অধিক রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশা করছে বিএফডিসি।

জেলে মতিলাল দাস বলেন, তিন মাসের জায়গায় প্রায় সাড়ে চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি হ্রদে মাছ ধরতে যেতে। আশা করছি এবার আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে।

রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, প্রায় সাড়ে চার মাস হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আশা করছি এবার মাছ বেশি ধরা পড়বে। বর্ষার শেষ দিকে বৃষ্টির পর মাছ বৃদ্ধিতে কিছুটা সময় পাওযায় আশা করছি মাছের আকারও বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীরাও সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর মাছ ধরা শুরুর প্রথম কয়েকদিন মাছের প্রচুর চাপ থাকে। এতো মাছের জন্য পর্যাপ্ত বরফ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় মাছ ঘাটেই পচে যায়। আমাদের দাবি ছিল, প্রথমদিকে কয়েকদিন এক বেলা করে মাছ ঘাটে আনা হোক। সেটাও এবার প্রশাসন নির্ধারণ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। পন্টুন মেরামত, মাছের অবতরণ ঘাটগুলো সংস্কারসহ নানান কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এবার দীর্ঘ সময় মাছ ধরা বন্ধ ছিল, তাই আশা করছি ভালো পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

আরও পড়ুন: আজ মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা