তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, শনিবার সকাল ৯টায় তাদের কেন্দ্রে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১২ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রিতে উঠানামা করে।
তবে, সাইবেরিয়ান বা হিমালয়ের হিম শীতল বাতাস এখনও প্রবাহিত না হওয়ায় শীতের তীব্রতা বোঝা যাচ্ছে না। বাতাস প্রবাহিত হতে শুরু হলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করবে।
আরও পড়ুন: কচুয়ায় শীতার্তদের মাঝে ৮ হাজার কম্বল বিতরণ
জেলায় সকালে কুয়াশার শিশিরে শরীর ভিজে যায়। সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না নিম্ন আয়ের লোকজন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৯ সালের একই সময়ে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০২০ সালের ওই দিন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে তা এ এলাকার বিরাট অংকের দরিদ্র শীতার্তদের তুলনায় খুবই কম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
গ্রামাঞ্চলের মানুষের অভিযোগ, জেলা শহর ও উপজেলা সদরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শীতার্ত মানুষ বঞ্ছিত হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলে শীতবস্ত্র বহন ও বিতরণে বিড়ম্বনার কথা বলছেন অনেকেই।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, আকস্মিকভাবে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ৩০ শিশু ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সিরাজউদ্দৌলা পলিন জানান, শীত বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শীত ও শীতজনিত রোগী ভর্তি বেড়েছে। হাসপাতালের কোনো শয্যা বর্তমানে খালি নেই। বহির্বিভাগেও প্রচুর ডায়রিয়া, সর্দি ও কাশির রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে কম্বলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
নাটোরে দরিদ্র প্রবীণদের মাঝে হুয়াওয়ের কম্বল বিতরণ
জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন জানান, পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ২১ হাজার ৮০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় স্থানীয়ভাবে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে বিতরণের জন্য ছয় লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে শীতবস্ত্রের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
নীলফামারীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা
উত্তরের আরেক জেলা নীলফামারীতেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত দুই দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা বিরাজ করছে এ জেলায়। দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষেরা।
গরম কাপড়ের অভাবে নিম্ন আয়ের লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনের বেলাতেও কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীত নিবারণ করতে গরম কাপড় সংগ্রহে নিম্ন আয়ের মানুষরা পৌরসভা মাঠের পুরোনো কাপড়ের বাজারে ভিড় করছেন।
শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব বেড়েছে। আর এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীরা।
হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত খুলনা
মাঘের হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনাঞ্চলের জনজীবন। বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কমেছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটার রুবেলের কম্বল বিতরণ
প্রচণ্ড শীতে কুড়িগ্রামে বোরো বীজতলা নষ্টের উপক্রম
তীব্র শীতের কারণে ব্যস্ততম মহানগরীতে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে লোকজন বের হচ্ছে না। যাত্রী কম থাকায় যান চলাচলও কমে গেছে। ঘন কুয়াশায় যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
হঠাৎ শীতের দাপট বাড়ায় কাবু হয়ে পড়েছে খুলনার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এছাড়া তীব্র শীতে কাতর হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে হতদরিদ্র মানুষ। সূর্যের দেখা মিললেও ঠাণ্ডা বাতাস বাড়িয়ে দিয়েছে শীত।
শীতজনিত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, জন্ডিস ও সর্দি-জ্বরে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, দুই দিন আগে খুলনা বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বিভাগে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ছে চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলায়।
তিনি বলেন, ‘সকালে খুলনার তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহ দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে।’