শস্য ভান্ডার খ্যাত খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা। গেল বছরের তুলনায় এখানে এ বছর কম জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে তরমুজের ফলন কম হলেও দামে খুশি কৃষকরা। এখানকার তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে।
তরমুজের সঙ্গে অন্যান্য ফসল আবাদ করে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
দাকোপে এ পর্যন্ত ২৮৩ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এলাকার হাজারো কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে বেড়েছে খুলনার দাকোপের তরমুজের চাহিদা
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গড় হিসাব মতে ২৮৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভবনা। এ তরমুজ খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ছয় হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল সাত হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে।
এছাড়া বোরো ধান ৩৪০ হেক্টর, সূর্যমুখী ৩০৮ হেক্টর, ভুট্টা ২৮ হেক্টর, বাঙ্গি ২০ হেক্টর, তিল ৭ হেক্টর, মুগডাল ৮ হেক্টর, পাট এক হেক্টর, আদা ৪ হেক্টর, হলুদ ৮ হেক্টর ও অন্যান্য শাক-সবজি ২০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আর পতিত রয়েছে ১৩ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমি।
তবে প্রচণ্ড খরা ও বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎস খাল ও পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ খেতে চরম সেচ সংকটে পড়েন এলাকার কৃষক।
চাষের মাঝের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় সেচ সংকট কিছুটা লাঘব হয়। এতে অল্প সংখ্যক কৃষকের লোকসান হলেও অধিকাংশই বাম্পার দাম পেয়ে হয়েছেন লাভবান।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে দুর্গম চরাঞ্চলে তরমুজ চাষ, ভাগ্য পরিবর্তনের আশা
কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় দালাল, ফড়িয়া ও পরিবহন সিন্ডিকেট, ফেরীঘাটে যানযটে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন এবং ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় না হলে আরও দাম বৃদ্ধি হতো বলে অনেকে মনে করেন।
কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক সিন্ধু রায় বলেন, তিনি ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তরমুজ চাষ শুরুর আগে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি রাতের আঁধারে কয়েকটি সুইচ গেট দিয়ে লবণ পানি তুলে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এতে জলাশয়গুলো লবণ-পানিতে সয়লাব হয়। ফলে মিষ্টি পানির অভাবে তিনি খেতে সেচ সংকটে পড়েন। পরবর্তীতে চাষের মাঝের দিকে বৃষ্টি হলে সেচ সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়। যার কারণে তার খেতে তরমুজের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে এবং মোট পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন।
তবে বীজে অতিরিক্ত ভেজালের কারণে এবার তরমুজের আকার অনেক ছোট হয়েছে বলে তিনি জানান।
বটবুনিয়া এলাকার কৃষক প্রণব কবিরাজ জানান, তিনি ১৮ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। এতে তার সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়। সেচের চরম সংকট এবং ভাইরাস লেগে সব গাছ মারা যায়।
কৃষি কর্মকর্তার মরামর্শ নিয়েও একটি গাছও বাঁচাতে পারেনি। তিনি এবার ব্যাপকভাবে লোকসানে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে.এম. মাকসুদুন্নবী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের ফলন অনেক কম হয়েছে। কিন্তু সেচের মিষ্টি পানির সংকট থাকলেও এলাকার কৃষকরা দাম পেয়েছেন ভালো। তরমুজ বিক্রিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তিনি আরও বলেন, তবে এ বছর আকার ছোট হলেও গড় হিসাব অনুযায়ী ২০ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার কেজি তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। গড়ে ১৪ টাকা কেজি ধরা হলে ২৮৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার আর বিঘা প্রতি ৬৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।