ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অসংক্রামক ব্যাধিজনিত অপরিপক্ক মৃত্যু হ্রাস করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাপস এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা নেই, পর্যাপ্ত পার্ক নেই, উদ্যান নেই, খেলার জায়গা নেই। এগুলো আমাদেরকে এখন করতে হবে। সেজন্য আমরা ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। যাতে ২০৫০ নাগাদ এই অবকাঠামোগুলো আমরা বৃদ্ধি করতে পারি। কারণ, এ সকল অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে এই সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। ‘
আরও পড়ুন: সব সংস্থাকে নিয়ে উন্নত ঢাকা গড়বো: মেয়র তাপস
তিনি বলেন, ‘এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি অসংক্রামক ব্যাধি নির্মূল করা যায়, কমিয়ে আনা যায়। এর ফলে অকাল মৃত্যু আমরা কমিয়ে আনতে পারব এবং এর মাধ্যমে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।’
শেখ তাপস বলেন, ‘বায়ু দূষণ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্য জটিলতার অন্যতম কারণ। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি। কিন্তু দুভার্গ্যবশত ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে আমরা কাজ করছি। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও পার্ক প্রতিষ্ঠা, প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি, হাঁটার জায়গা সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে আমরা সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি।’
সংক্রামক ব্যাধির চাইতে অসংক্রামক ব্যাধিতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করেন মেয়র বলেন, ‘আমাদের দেশে দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী অসংক্রামক ব্যাধির কারণে মারা যাচ্ছে। যেটাকে আমাদের জীবনের যে সীমা ৭২ বছর, ৭০ বছরের আগেই এ সকল অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর খননকাজ পুনরায় শুরু হবে: মেয়র তাপস
যথাযথ জনবল ও ডাক্তার পদায়নের অভাবে সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া যাচ্ছে না মন্তব্য করে শেখ তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদিও সরকার ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছে, ব্যাপক বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তারপরও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সেখানে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দু'টো হাসপাতাল আছে - মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মহানগর শিশু হাসপাতাল। সেখানকার অবকাঠামোগত বিষয়াবলী আমাদের এবং সেগুলোর উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। সেখানে সরকার থেকেই প্রয়োজনীয় জনবল, ডাক্তারের (মেডিকেল কনসালটেন্ট) নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের হাসপাতালগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও ডাক্তার পদায়ন করা হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, পর্যাপ্ত লোকবল ও ডাক্তারের অভাবে আমরা আমাদের মহানগর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি শাখাকে এখনো কার্যক্ষম (ফাংশনাল) করতে পারিনি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমান, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন বক্তব্য দেন।
ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল সেল (এনসিডিসি), বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম (বিডিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন আগামী ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে: মেয়র তাপস