আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সাবেক এমডি মো. রাসেল তার স্ত্রী সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে থাকা কোম্পানির শেয়ারের ৫০ শতাংশ রাসেলের শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভায়রা মামুনুর রশীদের বরাবর হস্তান্তরের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার ইভ্যালির শেয়ার নিতে ওই তিনজনের আবেদনের শুনানি নিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার আগের আদেশ সংশোধন করে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তবে শেয়ার হস্তান্তর হলে এই তিনজন আদালতের অনুমতি ছাড়া সে শেয়ার আর হস্তান্তর করতে পারবে না। সেই সঙ্গে তারা এই শেয়ারের বিষয়ে ইভ্যালি নিয়ে হাইকোর্টের গঠিত বোর্ডের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এছাড়া রাসেল ও শামীমা নাসরিন কারাগারে থাকায় তাদের থেকে শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আইজি প্রিজনকে সহযোগীতা করতে করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া ইভ্যালির ভবন মালিক শেখ সালাউদ্দিনকে আগামি ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বলেছেন। তবে তিনি হজির না হলে তাকে গ্রেপ্তার করে হাইকোর্টে নিয়ে আসতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বজনসহ ইভ্যালির রাসেলের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
বৃহস্পতিবার আদালতে রাসেলের শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভায়রার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শামীম আহমেদ মেহেদী। কোম্পানিটি অবসায়নের আবেদনকারী গ্রাহকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন তাপস কান্তি বল।
পরে ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন বলেন, ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন আজ আদালতে সশরীরে হাজির হন। তারা আদালতকে জানান, ইভ্যালি পুনর্গঠনের জন্য তারা কাজ করছেন। যারা ইভ্যালির কাছে টাকা-পয়সা ও পণ্য পাবেন সেগুলো ফেরত দেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চান তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটা ডিরেকশন দেন, যাতে ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যানের যে শেয়ারগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে কিছু সংখ্যক শেয়ার যেন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।
তিনি বলেন, ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান জেলখানায় অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় পুরো হস্তান্তর প্রক্রিয়া তাদের জেলখানায় থাকা অবস্থাতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও জেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে হবে। ওনাদের শেয়ারগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তখন তারা ইভ্যালি পুনর্গঠনের পাশাপাশি পরিচালনা বোর্ডকে সহযোগিতা করবেন।
ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে এক গ্রাহকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওইদিন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানিয়েছিলেন, আবেদনকারী ইভ্যালি অনলাইন শপিংমলে মে মাসে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি মোবাইলফোনভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেছেন। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনার রশিদও দিয়েছেন। কিন্তু এত দিনেও তারা পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়নি। আবেদনকারী যোগাযোগ করার পর তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু পণ্যটি দেয়নি কিংবা টাকাও ফেরত দেয়নি ইভ্যালি। যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি আবেদনকারী। তাই তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। আবেদনে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এছাড়া আদেশে ইভ্যালির যত সম্পদ রয়েছে, সেটা যেন বিক্রি অথবা হস্তান্তর না করা যায়। আদালত একটি নোটিশ ইস্যু করেন, কেন ইভ্যালিকে অবসায়ন করা হবে না।
এরপর গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনায় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে (চেয়ারম্যান) একটি বোর্ড গঠন করেন হাইকোর্ট। বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। আর সরকারি বেতনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর।
আরও পড়ুন: ইভ্যালির ৭ গাড়ি নিলামে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় বিক্রি
ইভ্যালির সম্পত্তি যে কোন স্বনামধন্য ফার্ম দিয়ে অডিট করতে নির্দেশ