জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তারা।
তারা জানান, বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন অপপ্রচার ও কৌশলী ভূমিকার কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এই তামাক পণ্যের প্রতি তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান সম্বলিত ই-সিগারেট বাংলাদেশে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় যথাযথ আইনের অনুপস্থিতি ই-সিগারেটের প্রাদুর্ভাব আরও মারাত্মকভাবে বাড়াতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন আইনের মাধ্যমে ই-সিগারেটের আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বন্ধ করা।
শনিবার (২৫ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুওর (ডর্প) এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে ডর্প-এর প্রোগ্রাম কোওর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, গতানুগতিক তামাক পণ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহারও ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ই-সিগারেটকে তামাকপণ্য ব্যবহারের গেটওয়ে হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবি জানান এবং সেই লক্ষ্যে প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাদের সোচ্চারও হওয়ার আহ্বান করেন।
আলোচনায় বক্তারা এই বক্তব্য ও দাবিকে সমর্থন করে বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে বাংলাদেশে এখনই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী রিয়াজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্পেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ড. শহীদুল ইসলাম, সাবেক উপসচিব মো. মহসীন আলী সরদার বীরপ্রতিক, সাবেক উপ-সচিব প্রফেসর ড. আব্দুল মালেক, সাবেক যুগ্ম সচিব খোন্দকার মো. মতিয়ার রহমানসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘ই-সিগারেট নিষিদ্ধের প্রস্তাবের পরও নতুন পন্থায় আনছে বহুজাতিক কোম্পানি’
সভাপতির বক্তব্যে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ই-সিগারেট বন্ধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
ই-সিগারেটের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইনের সংশোধন এবং কঠোর প্রয়োগ না করা হলে এই দুর্যোগ কাটবে না। এখনই ই-সিগারেটে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর শিগগিরই চিঠি দেবে।
এম মিজানুর রহমান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটকে কম ক্ষতিকর হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও, তা সঠিক নয়। বরং এটি খুবই ক্ষতিকর একটি পণ্য, যা তরুণ প্রজন্মের তামাক আসক্তি বাড়াবে।
ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিও হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রফেসর ড. আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশে নীরবে ই-সিগারেটের বাজার ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু এটি বন্ধে নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।
তিনি সরকারের প্রতি শিগগিরই ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনস্বার্থেই ই-সিগারেটের প্রসার রোধে নীতিনির্ধারকদের চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে: ই-ক্যাব
ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, তামাক কোম্পানি দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে এবং তরুণদের এই নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে। ই-সিগারেট নিষিদ্ধে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আইন পাস করতে হবে।
মো. মহসীন আলী সরদার বলেন ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার কোনো উপায় হতে পারে না। যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেট আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ভয়াবহতার ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন এবং এটি রোধে সকল পর্যায়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের সক্রিয় হবেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনাব মো. আজহার আলী তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি’র সদস্য আলী কবির হায়দার, শ্রী বসুদেব গাঙ্গুলী, ডা. মো. আমিনুল ইসলাম, এসকে হাবিবুল্লাহ এবং ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
আরও পড়ুন: তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে: ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা