জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট আনুমানিক দুই হাজার ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদন দেয়া হয়।
মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আজকের বৈঠকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় দুই হাজার ২১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘ব্যয়ের মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে এক হাজার ৮৭৫ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা এবং বাকি ৩৪১ দশমিক ১৮ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে আসবে।’
তিনি জানান, ১০টি প্রকল্পের মধ্যে চারটি সংশোধিত প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মান্নান বলেন, সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের নতুন নির্মাণ না করে ব্রিজ কালভার্ট করে পানি প্রবাহ ঠিক রেখে প্রকল্প হাতে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পানিপ্রবাহকে বাধা দেয়া যাবে না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
হাওর ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় সড়কের পরিবর্তে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: একনেকে ১০ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার ১০ প্রকল্পের অনুমোদন
সিলেট অঞ্চলের বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হবে বলে জানান মান্নান।
তিনি বলেন, আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণের প্রয়োজনীয় জায়গা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের তথ্যপত্র অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ (এক দশমিক ৬০তম কিমি-৩২তম কিমি) প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক হাজার ৯২ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হবে।
সড়ক প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল একটি নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার প্রশস্তকরণ এবং রেজু খালের ওপর ৩০৫ মিটার দুই লেনের রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধন।
প্রধান প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১১৩ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ, সাত দশমিক ২৪ লাখ ঘনমিটার আর্থ ফাইলিং, ৬০৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং শূন্য দশমিক ৩২ কিলোমিটার ফুটপাথ বাঁক সোজা করা।
পাঁচটি নতুন প্রকল্প হল- ১৭১ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ; ১১৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকায় মশলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ; ৭৫ কোটি টাকায় কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রকল্পের ৮১তম কিলোমিটারে অবস্থিত রেলবাজারে একটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ; ৩৩২ দশমিক ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা মহাসড়ক প্রকল্পের পিরোজপুর অংশে জরাজীর্ণ, সরু বেইলি সেতুর জায়গায় পিসি গার্ডার ব্রিজ ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ; ৯৮ দশমিক ৫০ কোটি টাকায় ঢাকা সেনানিবাস প্রকল্পে এমইএস (মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) এর ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধার সম্প্রসারণ।
জামালপুর টাউনের গেটপাড় এলাকায় একটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় ১৩২ কোটি টাকা (মূল্য বাড়িয়ে ৪২৩ দশমিক ৭০ কোটি টাকা); বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সদরে প্রধান বিচারিক হাকিম আদালত ভবন নির্মাণ-প্রথম পর্যায় (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের আগের প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ৪৬৪ দশমিক ৬০ কোটি টাকা থেকে ২০৪ কোটি টাকা কম; কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনে জরুরি সহায়তা (প্রথম সংশোধিত) অতিরিক্ত ব্যয়ে ৩০৭ কোটি টাকা (ব্যয় বেড়ে ৮৯২ কোটি) এবং কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) ৯২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়সহ প্রকল্প মূল্য বাড়িয়ে ৫৯০ দশমিক ২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে)।