তিনি বলেন, ‘অনেকে ছয় দফা দাবি সম্পর্কে অনেক কিছু বলতে চান। কেউ কেউ বলেন যে, এটি অন্য কারও পরামর্শে হয়েছিল। কিন্তু আমি জানি যে এটি অবশ্যই তার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) নিজস্ব চিন্তাভাবনার ফসল ছিল।’
৭ জুনের ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পালনের জন্য আয়োজিত এক কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
দেশের এই ঐতিহাসিক দাবির পটভূমি স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ১৯৬৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু ঢাকার বাইরে যেতে পারেননি। এ সময় তিনি আলফা বীমা সংস্থায় যোগদান করেন।
তাজউদ্দীন আহমদও ওই সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি তার কাজের জন্য নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চলে যান। পরে বঙ্গবন্ধু নিজেই নারায়ণগঞ্জে গিয়ে তাজউদ্দীন আহমদকে ঢাকায় নিয়ে এসে আলফা বীমা সংস্থায় চাকরি দিয়েছিলেন, জানান শেখ হাসিনা।
এছাড়া মোহাম্মদ হানিফকে বঙ্গবন্ধু আলফা বীমা সংস্থায় নিজের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময় চিন্তা করতেন, সেই চিন্তাভাবনাগুলো লিখে রাখতেন এবং ওই লেখাগুলো হানিফকে দিতেন টাইপ করার জন্য। এজন্য কেবল হানিফই এ (ছয় দফা দাবি) সম্পর্কে টাইপ জানতেন কারণ তিনি সেটি টাইপ করেছিলেন, অন্যথায় এটি সম্পর্কে কেউ জানতো না।’
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা থেকে এই ছয় দফা দাবি বের হয় ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার তিন সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধের পর এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) তখন সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফা দাবি ঘোষণার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পরে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা) এই দাবিগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন এবং এর প্রচারণা এগিয়ে নিতে মহান ভূমিকা পালন করেছিলেন।
‘বাংলাদেশের জন্য আমার মায়ের অবদানের কথা কল্পনাও করা যায় না। তিনি সবসময় জানতেন যে আমার বাবা কী চান এবং সে সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশে আত্মপ্রকাশ করেছিল এবং তারা দেশের বিজয়কে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।
‘আমি মনে করি এমন কোনো সুযোগ এখন আর নেই। ইতিহাস তার নিজের পথে ভ্রমণ করে, কেউ তা মুছে ফেলতে পারে না এবং এটি আজ প্রতিষ্ঠিত,’ যোগ করেন তিনি।
জাতির পিতার দেখানো পথে অনুসরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এবং ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবির ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।