শনিবার এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, টিকা বিতরণে ফ্রন্ট লাইনারদের তালিকা প্রণয়ন এবং যোগ্য প্রকৃতদের হাতে টিকা পৌঁছানো সম্ভব কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাই কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি ও প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকৃত যোগ্যদের হাতে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতে যে কোনো মূল্যে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে প্রযোজ্য আইন ও বিধি অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
ক্রেতা-ভোক্তা নেতারা টিকা বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দেশব্যাপী টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন ও এর কার্যক্রমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ, টিকা বিতরণের তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি রাখেন।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশে কোভিড টিকা দেয়া শুরু হবে: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
কোভিড টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের আহ্বান টিআইবির
ক্যাব জানায়, করোনায় লকডডাউন চলাকালে সরকার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিজেদের অনুগত, পোষ্য ও সমর্থকদের নাম দিয়ে কমিটির তালিকা তৈরি করে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করলেও কার্যত এ কমিটি কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লকডাউন চলাকালীন ত্রাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা ও প্রণোদনাসহ করোনা মহামারি প্রতিরোধ কার্যক্রমে এই কমিটির কোনো তৎপরতা বা কোনো কার্যক্রম গ্রহণ বা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল কি না জানা যায়নি। আর কমিটির সভাপতি কর্তৃক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে নিয়োগের বিধান হলো কমিটির সভাপতির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা। সে কারণে অনেকে নিজের সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনকে এসব কমিটিতে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি বানিয়ে কমিটি গঠন করেন। যার চূড়ান্ত পরিণতি এই কমিটি কাগজেই সীমিত থাকে।’
আরও পড়ুন: টিকা নিয়ে লুটপাটের আয়োজন চলছে, অভিযোগ বিএনপির
দেশে কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণে মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে
বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড টিকা দেয়ার উদ্যোগ থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ক্যাব নেতারা বলেন, কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি উপকরণ, পিপিই ও অন্যান্য কেনাকাটায় স্বাস্থ্য খাতে অবারিত দুর্নীতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। একই সাথে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বিতরণে যেরকম হযবরল অবস্থা ও নানা রকম অনিয়ম হয়েছিল ঠিক একই অবস্থা পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সময় চলছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা বিগত এক বছরে আয়োজন বা এ ব্যাপারে কোনো কার্যক্রম গৃহীত হওয়ার সংবাদ নেই। সে কারণে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যত মৃত। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যাগুলো সমাধানে স্থানীয় উদ্যোগে করণীয় নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য এই কমিটি গঠিত হলেও ফলাফল শূন্য। এখন সব বিষয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ভারতে শুরু হলো করোনার টিকাদান কর্মসূচি
টিকার বিকল্প উৎস খুঁজে বের করুন: সরকারকে বিএনপি
বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাব নেতারা বলেন, ভোক্তা সরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে ক্যাব দেশের ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এফবিসিসিআই ও ওষুধ শিল্প সমিতি দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। সরকারের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন চেম্বার ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হলেও ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতির অনুগত ও পোষ্য একজনকে মনোনীত করা হয়। যার কারণে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। তাই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা না হলে তৃণমূলে জবাবদিহি, সুশাসন ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় সরকারের মহতী উদ্যোগুলোর সুফল সাধারণ জনগণ পাবে না।