বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এবং জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা, ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- কর্মজীবী নারী, বিএফএলএলএফইএ, বিজিটিএলডব্লিওএফ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স, বিটিজিডব্লিওএল, ব্লাস্ট, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি, ফুলকি, নারী মৈত্রী, সবুজের অভিযান, ইটিআই, এলএফএমইএবি, পংক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিলস্, সলিডারিটি সেন্টার, উইমেন এন্ড ই-কমার্স এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মজীবী নারী’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে কি না সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাহস দিতে হবে, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়াতে পৃথকভাবে এই বিষয়ক কর্নার খোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে হবে।
ডিবিসির সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়াস চালাতে হবে এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব
কুতুব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে প্রতিটি কারখানায় অ্যান্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা এবং আইন প্রয়োগের প্রতি জোর দিতে বলেন।
জাতীয় শ্রমিক জোটের জেনারেল সেক্রেটারি নাঈমুল আহসান জুয়েল জানান, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনার পাশাপাশি মাঠে নামতে হবে এবং বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে প্রসার ঘটাতে হবে। বিষয়টিকে তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ন্যাশনাল ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্বলিত একটি পৃথক আইন করা দরকার।
বিএফএলএলএফইএ’র সচিব জয়নাল আবেদীন প্রচলিত আইনটির প্রয়োগের উপর জোর দিতে এবং কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিকতার পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
জান্নাত ফেরদৌস পান্না বেগম বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়ে যে মামলাগুলো ইতোমধ্যে হয়েছে, তার হাল অবস্থা জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটির পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার জায়গা তৈরি করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। গণপরিবহন ও রাস্তাঘাটে নারীরা যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা বা উচ্চশিক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান মনডিয়াল এফএনভি কনসালটেন্ট শাহিনুর।
সাংবাদিক আতাউর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে কি না এবং কমিটির মিটিং হয় কি না সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। কমিটি কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে না যাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি করেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। কেবল শ্রমিককেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্র নয় বরং সব কর্মক্ষেত্রে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে