বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘নজিরবীহিন এ সংকট মোকাবিলায় এটি একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। এ মহামারি দারিদ্র্য নিরসন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য অর্জনকে, যেমন- জনসাধারণের আয় ও জীবিকাকে প্রভাবিত করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের এ প্রকল্পগুলো আরও বেশি এবং মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে এবং একই সাথে ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি গড়বে।’
শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল অনট্র্যাপ্র্যানারশিপ (প্রাইড) প্রকল্পটি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্কে সামাজিক ও পরিবেশগত মান জোরদার করবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে সফটওয়্যার পার্কের ৪০ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০ শতাংশ কর্মসংস্থান হবে নারীর।
এছাড়া এ প্রকল্প মিরসরাই-ফেনী অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর-২ এর উন্নয়ন করবে যার মধ্যে থাকবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সড়ক নেটওয়ার্ক, সৌরবিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন এবং জলবায়ু-সহনশীল পানি, স্যানিটেশন ও বিদ্যুত নেটওয়ার্ক স্থাপন ইত্যাদি। তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) এবং তথ্য-প্রযুক্তি সমর্থিত সেবাসহ স্থানীয় এবং বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পটি কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৯৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ‘এনহান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকনোমি’ প্রকল্প সরকারের সব সংস্থার জন্য একটি সমন্বিত, অংশীদারিত্বভিত্তিক এবং ক্লাউড-কম্পিউটিং ডিজিটাল প্লাটফর্ম স্থাপন করবে এবং সাইবার নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাবে, যা সরকারি খাতে আইটি বিনিয়োগে ২০০ মিলিয়ন ডলারের খরচ বাঁচাবে। এছাড়া ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জনের জন্য এ প্ল্যাটফর্ম সরকারকে কার্যকরভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম করবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে যার এক-তৃতীয়াংশ হবেন নারী ও ১ লাখ তরুণ-তরুণীকে ডিজিটাল ও নতুন প্রতিস্থাপন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে। এটি একটি ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে যা তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার আয় বাড়াতে সহায়তা করবে এবং স্থানীয় আইটি কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ‘সেকেন্ড প্রোগ্রামেটিক জবস ডেভলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্প করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের স্বল্প-মেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপের সহায়তার জন্য সরকারের আর্থিক সংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যত সংকট মোকাবিলায় শ্রমজীবি এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করবে। এ অর্থায়ন বাংলাদেশের নাগরিক বিশেষত নারী, যুব জনগোষ্ঠী, অভিবাসী শ্রমিক এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো সম্প্রসারিত একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর শক্তিশালী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং বিশেষত মহামারির সময় শ্রমিকদের ঝুঁকি কমানো।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের আইডিএ কর্মসূচির শীর্ষ পর্যায়ের গ্রাহক, যার পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্ব ব্যাংক এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান, সুদবিহীন এবং রেয়াতি সুদের ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।