প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আর ১১ হাজার বাড়ি বিতরণের পর বাংলাদেশে আর কোনো গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষ থাকবে না।
ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি বলেন, 'আর মাত্র ১১ হাজার ঘর বিতরণ করলেই বাংলাদেশ গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত দেশ হবে।’
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বস্তিবাসীদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করেছে। সেখানে তারা বস্তির সমান ভাড়া পরিশোধ করে থাকতে পারবে।
আরও পড়ুন: কোটাবিরোধী আন্দোলন অযৌক্তিক, বিষয়টি বিচারাধীন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের মধ্যে ঘর বিতরণ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে কাউকে ঘর ও ভূমিহীন রাখা হবে না।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য এগুলো খোলা হয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ইইউ।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তার পরবর্তী কর্মস্থল ব্রাসেলসে। সেখানে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে কাজ করবেন এবং তিনি বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে পারবেন।
'ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ' চালু প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই স্কিম আইনি পথে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অভিবাসনের দ্বার উন্মুক্ত করবে। কারণ বাংলাদেশি দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিরা এ সুযোগ গ্রহণ করবে এবং কাজের জন্য বৈধ অনুমোদন পাবে।
তিনি বলেন, যারা ইমিগ্রেশন করবেন তারা ৪-৫ বছর পর দেশে ফিরতে পারবেন, তাই এক্ষেত্রে মেধা পাচারের কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং দেশের জন্য অবদান রাখবে। ‘সুতরাং, আমি এটিকে মেধা পাচার হিসেবে মনে করি না।’
লাকসাম-চট্টগ্রাম রুটে রেল সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে বলেন, এটি ব্যয়বহুল ও অলাভজনক বলে মনে করা হচ্ছে। ইইউ এই প্রকল্পে সমর্থন দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রেস সচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকায় সরকার ইইউয়ের অর্থায়নে একটি উপযুক্ত ও টেকসই প্রকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশ-ভারত কানেক্টিভিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। বাংলাদেশের মধ্য দিয়েও ভারতের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, 'আমরা ট্রান্স-এশিয়ান রেল কানেকটিভিটিকেও আমরা সেভাবে বিবেচনা করছি।’
বিমসটেককে শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। কারণ থাইল্যান্ডের পর বাংলাদেশ এর পরবর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দুই ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান ইইউ রাষ্ট্রদূত।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সব সময় এই ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে শান্তির আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ‘শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া ও গাজায় নয়, আমরা সর্বত্র শান্তি চাই।’
এ সময় অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সশস্ত্র বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী