চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় এক শিশুকে গ্রেপ্তার করে বয়স বেশি দেখিয়ে আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী সাকিব আলী নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি যুগীচাঁদ মসজিদ লেইন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং পাঠানঠুলি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
তার পরিবারের দাবি, সাকিব আলীর জেএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী ছেলের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। কিন্তু পুলিশের মামলায় তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর।
সাকিব আলীর বাবা মোহাম্মদ আলী বলছেন, তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। ১৬ জানুয়ারি ক্রিকেট খেলার জার্সি কিনতে স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টাকালে পুলিশ তার শার্টের কলার ধরে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: আর্জেন্টিনার জার্সিতে আনসার সদস্য শনাক্ত
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সাকিব পড়ালেখার খরচ জোগাতে এলাকার ‘ভাই ভাই ফার্মেসি’তে মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরিও করে বলে জানিয়েছে পরিবার।
সাকিবের মা বলেন, ‘ছেলে নিজেকে স্কুল শিক্ষার্থীর পরিচয় দিলেও পুলিশ সদস্যরা তার কথা শোনেননি। তাকে আটকের খবর পেয়ে সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় অপেক্ষা করেও তাদেরকে বুঝাতে পারিনি। পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ছেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।’
পাঠানটুলি সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমীরণ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে সাকিব আলী। সে কোন দলের রাজনীতি করে না। তাকে আটক করলেও ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
আইনজীবী ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান ইউএনবিকে বলেন, প্রায় ঘটনায় দেখা যায় পুলিশ কোন শিশুকে আটকের পর তাদের বয়স বাড়িয়ে আদালতে চালান করে। অথচ শিশু অপরাধের জন্য শিশু আইন আছে। তাদের আদালতে মাধ্যমে সেইফ কাস্টডিতে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। বয়স বেশি দেখানোর ফলে অপরারাধী শিশুকে সাধারণ হাজতির সাথে কারাগারে পাঠানো হয়, যা দুঃখজনক। সাকিব আলীর ক্ষেত্রে যদি তা ঘটে থাকে তাহলে আদালতে তার জন্মসনদ ও স্কুলে বয়স প্রমাণের কাগজপত্র দেখিয়ে জামিন চাইলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, সাকিব আলী নামে ওই শিক্ষার্থীকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আটক করেছে। কোনও শিক্ষার্থী অপরাধে জড়ালে তাকে কি মামলায় আসামি করা যাবে না? প্রাথমিকভাবে ছেলেটির বয়স ১৯ হতে পারে বলে মনে হয়েছে, সেটাই এজাহারে লেখা হয়েছে। যদি বয়স ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে তদন্ত করে শিশু আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২৯