জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করতে 'ইনক্লুসিভ বাজেটিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং ফর ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (আইবিএফসিআর)' প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বে ১.২ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি সই করেছে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
এই ১.২ মিলিয়ন ইউরোর অনুদান বাংলাদেশে এএফডি’র ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর জলবায়ু নীতিকেন্দ্রিক ঋণ প্রকল্পকে জোরদার করবে।
ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং এএফডির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিসিলিয়া কর্টেস।
এ সময় আরও ছিলেন ফ্রান্স দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী।
আরও পড়ুন: জ্বালানি খাতে সবুজ রূপান্তর সংলাপে ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত
বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এই কারিগরি সহযোগিতা চুক্তির লক্ষ্য হলো জলবায়ু-সংবেদনশীল কৌশলগত পরিকল্পনা এবং তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন, জলবায়ু-সংক্রান্ত সরকারি অর্থায়নের সুনিয়ন্ত্রিত পরিচালনা এবং স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য আরও কার্যকর পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রণয়ন।
ক্লাইমেট ফিসকেল ফ্রেমওয়ার্ককে (সিএফএফ) ঘিরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইউএনডিপির পূর্ববর্তী কার্যক্রম এবং আইবিএফসিআর প্রকল্পের প্রথম পর্বটি জলবায়ু-সংবেদনশীল সরকারি অর্থায়নের (ক্লাইমেট সেন্সেটিভেটি পাবলিক ফাইন্যান্স) ভিত্তি প্রস্তরের ভূমিকা পালন করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে সহায়তা করতে এবং জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই, স্বল্প-কার্বন নির্ভর উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে আইবিএফসিআর প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বে নীতিনির্ধারণী ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু ইস্যুকে আরও গভীরভাবে একীভূত করা হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও গত এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বগ্রাসী প্রভাবের কারণে এই উল্লেখযোগ্য উন্নয়নও বিফলে চলে যাচ্ছে। অর্থনীতির প্রতিটি খাত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আক্রান্ত।’
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মানবিক অভিঘাতের দিক বিবেচনা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেন না নারীরা, মেয়ে শিশুরা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থায় থাকা অন্যান্য জনগোষ্ঠীগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সামনে আরও বেশি অসহায়।
আরও পড়ুন: ১ বিলিয়ন ইউরোর জলবায়ু অভিযোজন চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জানিয়েছেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত
এ প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইউএনডিপি বাংলাদেশের কাজ করার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান জাতীয় ও স্থানীয় উভয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু সম্পর্কিত সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং মনিটরিং জোরদারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
ফ্রান্স রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এই অনুদান তহবিল চুক্তিটি (গ্রান্ট ফান্ডিং এগ্রিমেন্ট) একটি টেকসই এবং স্বল্প-কার্বনভিত্তিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকতে ফ্রান্সের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই স্বাক্ষর বহন করে।”
স্টেফান লিলার বলেন, ‘জলবায়ু তথ্য নির্ভর সরকারি অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ুকে সরকারি অর্থায়নের ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ায় মূলধারায় এনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই উদ্যোগ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এর ফলে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তনের উপাদানগুলো আরও কার্যকরভাবে সংযোজিত হবে এবং একটি জলবায়ু সহনশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়। আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরে আনন্দিত এবং বিশ্বব্যাপী ইউএনডিপির বিভিন্ন উদ্যোগে পাশে থাকার জন্য ফ্রান্সের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’