জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) আবদুল্লাহ শাহিদ সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের ‘প্রশংসনীয় নেতৃত্ব, তাৎপর্যপূর্ণ অংশগ্রহণ ও উল্লেখযোগ্য অবদানের’ প্রশংসা করেছেন।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পিজিএ বাংলাদেশের নেতৃত্বে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এ প্রশংসা করেন।
২০২১ সালের ৭ জুন মালদ্বীপের আবদুল্লাহ শাহিদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
শাহিদ বলেন, বাংলাদেশ এখন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত– ইউএন উইমেন নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি, শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের চেয়ার এবং আইএমআরএফের কো-ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে, যা এর সামর্থ্য ও নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের
বৈঠকের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন পিজিএ’র কাছে দুটি প্রস্তাব পেশ করেন। এগুলো হলো- জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,‘এসডিজি বাস্তবায়নের পর্যালোচনা’ শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্ট আয়োজন করা এবং সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের অধীনে উন্নয়নশীল দেশের জন্য অর্থ, পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া।
বিশেষ করে করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অধিকাংশ তহবিল ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মোমেন বলেন, প্রস্তাবিত উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্টটির আয়োজন করা হলে তা এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার এবং তহবিলের ঘাটতি পূরণের পথ পর্যালোচনা করার সুযোগ তৈরি করবে।
এছাড়া সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের আওতায় মন্ত্রী পর্যায়ের এই ফোরামের বিষয়ে মোমেন বলেন, এই ফোরাম সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের বিষয়ে সংলাপের জন্য একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করবে।
এ সময় পিজিএ এই প্রস্তাবগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় আইসিটি খাতে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং করোনার টিকাকে ‘সর্বজনীন বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতির কথাও উল্লেখ করেন।
এ সময় পিজিএ জিডিপির প্রবৃদ্ধি, করোনা মোকাবিলাসহ বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ক আলোচনাকালে রোহিঙ্গা শিশুদের নিজ ভাষায় শিক্ষাদান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যায়নি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিজিএ’কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। তার জাতিসংঘে ‘গ্যালভানাইজিং মোমেন্টাম ফর ইউনিভার্সাল ভ্যাকসিনেশন’ বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ এবং মহীসোপান সীমা বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে আরও জনবল নেবে