বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করতে দেশীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রণালয় ও তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেশের যা কিছু সম্পদ আছে, দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
রবিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং জনগণ সম্মান অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা এখন মাথা উঁচু করে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াবে।
তিনি আবারও বলেন, ‘আমি জানতাম পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমার সেই বিশ্বাস ছিল। একপর্যায়ে আমি নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করতে পারবে তা দেশ-বিদেশের অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা তা করেছি (পদ্মা সেতু নির্মাণ), এটি কেবল ইট-সিমেন্ট-ইস্পাত-লোহা দিয়ে তৈরি কংক্রিটের অবকাঠামো নয়; এটি আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক।’
তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু আমাদের বিজয় ও সম্মানের প্রতীক, কারণ আমরা বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী বিজয়ী জাতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে হবে হ্যাঁ আমরা পারি। শুধু উন্নত দেশগুলোই পারে না, আমরাও করতে পারি। ইনশাআল্লাহ, আমরা নিজেদেরকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব এবং এটাই আমাদের বিশ্বাস।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুখী-সমৃদ্ধির দেশ সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার অধিকাংশই তার (আওয়ামীলীগ ) সরকার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ অপচনশীল পণ্য পরিবহন করা হবে।
তিনি এসব পণ্যের ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য আমিন বাজার, মহাখালী, সায়েদাবাদ/কাঁচপুর এবং পোস্তগোলা/কেরানীগঞ্জে পাইকারি বাজারের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার এলাকায় চাপ কমাতে আমাদের এগুলো তৈরি করতে হবে।
তিনি রাজধানীর চারপাশে রিং রোড নির্মাণের ওপর জোর দেন, যাতে যানবাহন চলাচল ও পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন হয়।
বন্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ দেশ হওয়ায় জনগণকে এর সঙ্গেই বাঁচতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব পরিকল্পনা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য।’
তিনি আবারও সকলকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তার দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে এবং এভাবে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে চাই যার মাধ্যমে আমরা ক্ষমতা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেছে। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে জাতি দুটি মেগা ইভেন্ট হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করে জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সরকার ২০২১-২০৪১ এর জন্য একটি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
এর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ও সচিবরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ নিজ এপিএ-এর অনুলিপি হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এপিএ স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এপিএ গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
চুক্তির অধীনে, মন্ত্রণালয়গুলো সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের ভিশন, মিশন ও কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করবে এবং বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
সরকার প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং সর্বোপরি, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি খাতের জন্য ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এপিএ পদ্ধতি চালু করে।
এপিএ প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য হল মন্ত্রণালয়ের ফোকাস প্রক্রিয়া-অভিযোজন থেকে ফলাফল-অভিযোজনে নিয়ে যাওয়া এবং বছরের শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সামগ্রিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক ও ন্যায্য ভিত্তি প্রদান করা।
এপিএ হল বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ থেকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, যাতে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়। যার লক্ষ্য তাদের বার্ষিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা এবং দায়িত্বের প্রতি তাদের দায়বদ্ধ করা।
সরকার মন্ত্রণালয় ও তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর সঙ্গে এপিএ স্বাক্ষর করে। যার মধ্যে সরকারের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ীদের মধ্যে এপিএ এবং জাতীয় সততা সেবা পুরস্কার তুলে দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে কুয়েতের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর