কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মাছ, মুরগি, মাংস, আলু, কাঁচা মরিচের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম।
মসলার দাম বাড়ার জন্য মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
বর্তমানে জিরা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়, যা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল ৫৭০ থেকে ৬৫০ টাকা। আর এলাচের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে। প্রিমিয়াম মানের এলাচ যা আগে ৩ হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি হতো, তা এখন প্রতি কেজি ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঈদ: চট্টগ্রামে মসলার বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
শুক্রবার (৩১ মে) রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি রসুন ২২০ থেকে ২৭০ টাকা, আদা ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা, শুকনো লাল মরিচ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মসলার খুচরা বিক্রেতা সৌরভ সাহা শুক্রবার ইউএনবিকে বলেন, ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে সাধারণত মসলা পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, তবে এবার দাম বেড়েছে ডলারের দাম সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বেড়ে যাওয়ায়।
তিনি বলেন, মার্কিন ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি দাবি করে পাইকাররা প্রতি সপ্তাহে মসলার দাম বাড়াচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশে সাধারণত মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়, তাই এই বৈদেশিক মুদ্রার যেকোনো উত্থান-পতন ভোগ্যপণ্যের দামকে প্রভাবিত করে।
এছাড়া পাইকারি বাজারে গোল মরিচের দাম ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। কাজু বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, আর ছোলা ১০২ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের চাঁদপুর ট্রেডার্সের রমজান আলী পুরান ঢাকার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা মৌলভীবাজার থেকে সপ্তাহে দুবার মসলা সংগ্রহ করেন। তিনিও সম্প্রতি দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, 'মাত্র ২ সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি জিরা ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকায় কিনেছিলাম, কিন্তু এখন ৭০০ টাকা দিতে হচ্ছে। যদিও ডলারের নতুন হার কার্যকর হওয়ার আগেই এসব মসলা আমদানি করা হয়েছিল।’ এটি একটি সিন্ডিকেটের কাজ বলে মনে হচ্ছে- এমন দাবিও করেন এই ব্যবসায়ী।
অপর এক দোকানের এক কর্মচারী বলেন, মাত্র ৬ মাস আগেও প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, এখন তা ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্পষ্টতই, একটি সিন্ডিকেট মসলার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
পুরনা ঢাকার মৌলভীবাজার পাইকারি বাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা মুঠোফোনে ইউএনবিকে বলেন, ডলারের বর্ধিত দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমদানিকারকরা দাম বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
চলতি মাসের শুরু থেকেই ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে প্রতি ডজন ডিম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতি ডজনে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বাজারে মসলার দামের ঊর্ধ্বগতি, ঈদুল আজহার আগে বিপাকে ক্রেতারা
বিশেষ মানের ফার্মের ডিমের দাম প্রতি ডজন ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম প্রতি হালি (৪ পিস) ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
গত দুই সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি ও পাকিস্তানি সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আকার ও মান ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে এবং আকার ও মান ভেদে প্রতি কেজি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে প্রতি কেজি কক মুরগি ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি (দেশি) মুরগি প্রতি কেজি ৬৭০ থেকে ৭৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাবার ও বাচ্চার দাম বাড়ায় বেড়েছে মুরগির দাম। এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহে মুরগির খামারেও প্রভাব পড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে দামেও।
মান ভেদে শুক্রবার প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় ৩০ টাকা বেড়েছে। মান ভেদে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকায়, যা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার মাছের বাজারে প্রতি কেজি ৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।
রুই ও কার্প জাতীয় মাছ কেজি আকার ও মান অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার নদীর ছোট মাছসহ অন্যান্য মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখীতায় স্থিতিশীল রয়েছে। দাম বাড়ার জন্য মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন, ঢেঁড়স, সজিনা ডাটা, বরবটি শিম, করলাসহ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। মৌসুম শেষ হওয়ায় বেড়েছে টমেটোর দাম। ভালো মানের টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
বেগুনসহ অন্যান্য সবজি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ, চাল কুমড়া, ও ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল, গম, আটা, দুধ, সয়াবিন, সুগন্ধি চাল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।