ফুটপাতে বসে পুরোনো কাপড় সেলাই করে দুমুঠো ভাতের যোগান আসে রাজধানীর সায়েদাবাদের রাবেয়া বেগমের। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে ডেঙ্গু জ্বর।
দুই ছেলে রাব্বী ও হাসান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ভর্তি করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে গেছে বলে তাদের হাসপাতাল ছাড়ার ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক।
বাসায় নেওয়ার পর আবার জ্বর আসে দুই ছেলের। ফের নিয়ে আসেন মুগদা হাসপাতালে। ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। সেখানেও দুই ছেলের জন্য দুটি বেড পাননি। হাসপাতালের মেঝেতে এক বিছানায় দুই ছেলেসহ তিনি কোনো রকমে পার করছেন দিন-রাত।
রাবেয়া বেগম জানান, হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার পর আবার জ্বর আসে। একই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথায় কাতরাতে থাকে ছেলেরা। রাব্বীর বয়স চার বছর তিন মাস এবং হাসানের বয়স ১৯ মাস। দুই ছেলেকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসে মেঝেতে এক বেডে নিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই তার।
ক্ষুব্ধ রাবেয়া বলেন, দুই ছেলের জন্য আলাদা বেড চেয়েছি বার বার। এক বেডে তিনজন কীভাবে থাকা সম্ভব? ওয়ার্ড বয়রা খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। বলছে এক বেডে থাকতে পারলে থাকেন না হলে চলে যান। তাই বাধ্য হয়ে এক বেডে দুই ছেলে নিয়ে তিনজনে মিলে থাকছি।
একই সঙ্গে চিকিৎসা নিয়েও অভিযোগ করেন রাবেয়া।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকের কথায় একবার বাড়ি ফিরলেও আবার আসতে বাধ্য হয়েছি। দুই ছেলের জ্বর সারছে না। সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা। ছেলেরা বসতেও পারছে না। ডাক্তার ও নার্সরা বলছেন, সারবে। কিন্তু ছেলেদের কষ্ট তো সইতে পারছি না।’
হাসপাতাল থেকে সুস্থতার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেও আবার আসতে হচ্ছে হাসপাতালে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। কেউ বলছেন তড়িঘড়ি করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমন অভিযোগ করেন জুরাইন থেকে ২১ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসা রিনা আকতার। ছেলে রায়হানের ডেঙ্গু পরীক্ষার রেজাল্ট পজেটিভ হলে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করেন ১৬ জুলাই। ২১ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেও নানা সমস্যা হচ্ছিল। অবস্থার অবনতি হলে ২৫ জুলাই আবার হাসপাতালে এলে চিকিৎসকেরা ভর্তি করতে পরামর্শ দেন। তারও ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে।
ছোট্ট শিশুটিকে কাতরাতে দেখা যায়। নানাভাবে তার সমস্যার কথা বোঝানোর চেষ্টা করছে অবুঝ শিশুটি। রিনা আকতার জানালেন, ব্যথায় হাত নাড়াতে পারছে না রায়হান। তাই কান্নাকাটি ও চিৎকার করছে।
এ বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপতালের পরিচালক নিয়াতুজ্জামান জানান, কমপ্লিকেটেড রোগী বা যারা এর আগেও আক্রান্ত হয়েছে এবং অন্য রোগে আক্রান্ত যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, কিডনি, ক্যান্সার তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা একটু বেশি।
তিনি বলেন, করোনার ক্ষেত্রে যেমন সুস্থ হওয়ার পরবর্তী সময়ের জটিলতা ছিল, এবার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও কিছুটা দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে শতভাগ সেরে উঠা যায়। কিন্তু যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের স্বাভাবিক সুস্থতা ফিরে আসতে কিছুটা দেরি হয়। এ কারণে এবার আমরা এরকম কিছু কিছু জটিলতা দেখতে পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: দেশে ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭৩১