দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে গবাদিপশুর মৃত্যুসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে এত লম্বা সময় তাপপ্রবাহ দেখা যায়নি।
তবে দীর্ঘসময় ধরে তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি ঝুঁকিতে রয়েছে গবাদিপশুও। মৃত্যুসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির কারণে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এটি মাঠ পর্যায়ের ভেটেরিনারিয়ান ও প্রাণি বিশেষজ্ঞদের জন্য নতুন একটি অভিজ্ঞতাও। তারা মনে করেন বৈশ্বিক উষ্ণতায় জলবায়ু উপযোগী খামার ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও গবাদি পশু-পাখির জাত নির্বাচন নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
তীব্র তাপপ্রবাহে গবাদিপশুর উপর কেমন প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে ইউএনবিকে এসব তথ্য জানান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
চুয়াডাঙ্গার জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তীব্র গরমে পোল্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি হিট স্ট্রোকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর ক্ষেত্রে খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ শেষ হলে মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে সেটি জানা যাবে।
এসময় শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিকও বলেন, তাপপ্রবাহ শেষ হলে মাঠপর্যায়ের সম্পূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে।
তবে বাকৃবির তিনজন প্রাণী বিশেষজ্ঞ প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান ও ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ তাপপ্রবাহে গবাদিপশুর কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, উষ্ণ তাপমাত্রায় মশা-মাছিসহ বিভিন্ন রোগ-জীবাণু বহনকারী কীটপতঙ্গের প্রজনন বাড়ে। তবে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এসব কীটপতঙ্গের প্রজনন বন্ধ হয় এবং মারা যায়।
এ প্রাণি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতায় শীত প্রধান দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এসব কীটপতঙ্গ প্রজনন উপযোগী হওয়ায় অনেক কীটপতঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ফলে পশু-পাখি ও মানুষে পরজীবী আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
মুরগির হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে না করারই পরামর্শ থাকবে। কারণ এতে মুরগি তার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং ঘরের আর্দ্রতা অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে শ্বাসকষ্টে মুরগি মারা যাবে।
এছাড়া মুরগিকে সকালে ও দিনের উত্তপ্ত সময়ে সার্বক্ষণিক খাবার না দিয়ে বাইরে তাপমাত্রা কিছুটা কমার পর বিকেল থেকে সার্বক্ষণিক খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আরেক প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান ইউএনবিকে বলেন, প্রাণীর জন্য গরমের মধ্যে মানুষের মতো শরীর ঠান্ডা করে খাবার খাওয়ার তেমন সুযোগ নেই। প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা রোদের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঘাসসহ নানা রকম খাবার খাচ্ছে। এত গরমে তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। ফলে তাদের সম্পূর্ণ কিডনি বা কিডনির একটি অংশ বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উচ্চ তাপমাত্রায় গবাদিপশুর মস্তিষ্কে প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হাইপোথ্যালামাস ভালোভাবে কাজ না করার আশঙ্কা রয়েছে। তখন শরীরের তাপমাত্রা হয় একদম কমে যাবে না হলে একদম বেড়ে যাবে। এমনকি এ পর্যায়ে গবাদিপশুর হজম ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: সুস্থ-সবল জাতি গঠনে ওয়ান হেলথ গুরুত্বপূর্ণ: বাকৃবি উপাচার্য