অর্থ পাচার ও শেখ হাসিনার উপর ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে ‘দেশের ভাগ্য ফয়সালা হবে রাজপথে’ আহ্বানের সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা।
তারা বলেছেন, এটি ‘নতুন করে সহিংসতা শুরু করার জন্য একটি প্ররোচনা।’
এ ছাড়া তারা তারেকের ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার’ তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তারা বলেন, ‘পলাতক অবস্থায় এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ।’
তারেকের ছবিসহ বিএনপির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘দেশের ভাগ্য ফয়সালা হবে রাজপথে।’
তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর বিশিষ্ট আইন, শিক্ষাবিদ এবং বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘একজন পলাতক ব্যক্তির কী সাহস! এটা বিরাট একটা উসকানি!’
তিনি বলেন, ‘বিচার এড়াতে তারেক বছরের পর বছর ধরে লন্ডনে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায় ২ আগস্ট
অধ্যাপক রহমান আরও বলেন, ‘একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের মাটিকে এ ধরনের বেআইনি কাজ করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’
তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমাদের মিশনের অবিলম্বে ব্রিটিশ সরকারের কাছে কঠোর প্রতিবাদ জানানো উচিত। বাকস্বাধীনতার ছদ্মবেশে এটাকে অনুমোদন করা যাবে না।’
আইনজীবী, অধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা রানা দাশগুপ্ত একই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অতীতে বিএনপি কর্তৃক সংগঠিত সহিংস হামলার কথা বিবেচনা করে তিনি বলেন, ‘তারেকের এই বর্তমান হুমকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য গভীর উদ্বেগজনক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দাশগুপ্ত বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি মেনে চলে; তাদের প্রকাশ্যে এই ধরনের হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজপথে সহিংসতা এবং সারা দেশে সংখ্যালঘুদের উপর টার্গেটেড হামলা এখনও ভুক্তভোগীদের পীড়া দেয়।
আরও পড়ুন: তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সাক্ষ্য
দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে শতাধিক পরিবারকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সম্পত্তি লুট করা হয়েছিল এবং উপাসনালয়গুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে অসংখ্য মৃত্যু এবং সম্পত্তি ও জীবিকা ধ্বংস হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যখন তারেক ও তার মা দেশ শাসন করত সেসমযের বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা সংঘটিত সংখ্যালঘুদের উপর হামলাগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।’
২০০১ ও ২০০৬ সালের মধ্যে তারেক বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছিল। যার ফলে এফবিআই এজেন্ট দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলাসহ অর্থপাচার ও বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ‘শোষক সরকার ও সহিংস রাজনীতির’ প্রতীক আখ্যা দিয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এমনকি সে সময় তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
মার্কিন দূতাবাসের একটি ফাঁস হওয়া মার্কিন দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাস বিশ্বাস করে যে তারেক ‘গুরুতর রাজনৈতিক দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা ও মার্কিন বৈদেশিক সহায়তার উদ্দেশ্যগুলোতে প্রবাব ফেলে।
আরও পড়ুন: দুদকের মামলায় তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষ্য