দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে নতুন একটি চুক্তি সই হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং নেদারল্যান্ডসের কর ও কর প্রশাসনমন্ত্রী এমএলএ ভ্যান রিজ নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই চুক্তি সই হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই প্রথমবারের মতো একটি চুক্তি সই হয়।
আরও পড়ুন: রেলের খাবার মানসম্মত না হলে চুক্তি বাতিল: রেলমন্ত্রী
এরই মধ্যে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিতে নানা পরিবর্তন এসেছে, যেমন ওইসিডি মডেল বা জাতিসংঘের মডেল।
এছাড়া স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
নতুন চুক্তিতে ৩৩টি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে করের পরিধি বাড়ানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, আবার নতুন বিষয় উৎপত্তির জন্য কিছু নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।
চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, নতুন চুক্তিতে বিদ্যমান বিধান সংশোধন করে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং কারিগরি সেবা ফি সংযোজনের ফলে সেবার বিপরীতে সেবা ও বিল পরিশোধের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে কর আদায় নিশ্চিত করা হবে।
নতুন চুক্তিতে শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনী মুনাফা বাংলাদেশে করযোগ্য বলে বিধান রাখা হয়েছে। ফলে উৎস দেশে বাংলাদেশের অর্জিত মূলধনী মুনাফা থেকে কর আদায় করা সম্ভব হবে।
বিদ্যমান চুক্তির কোনো অনুচ্ছেদের আওতাভুক্ত নয় এমন কোনো আয়ের ক্ষেত্রে করদাতার উপর তার নিজ দেশে কর আরোপের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় নতুন চুক্তিতে সংশোধন করে করদাতার এ ধরনের আয় যে দেশে উৎপন্ন হয়, সেখানে করারোপ করা হয়েছে।
দাবি করা কর আদায়ে সহায়তার জন্য একটি অনুচ্ছেদ নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ উভয় রাষ্ট্রকে রাজস্ব আদায়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। নেদারল্যান্ডসের ১৫টি অংশীদার দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
আরও পড়ুন: গঙ্গা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করতে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির আহ্বান
অন্যদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডে ২০০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। দেশটি বাংলাদেশের নবম বৃহত্তম রপ্তানি অংশীদার।
বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিটওয়্যার, ওভেন, গার্মেন্টস, গলদা চিংড়ি, জুতা, টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য এবং বাইসাইকেল।
অন্যদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস থেকে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শাকসবজি, প্রস্তুতকৃত খাদ্য উপাদান, জীবন্ত প্রাণী (পশু ও পাখি), খনিজ, রাসায়নিক, ওষুধ, জৈব রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও রাবারসহ ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) দিক থেকে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান চতুর্থ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২ হাজার ৫৬০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে নেদারল্যান্ডস।
জ্বালানি, বাণিজ্য, চামড়া খাত, চামড়াজাত পণ্য ও সিমেন্ট খাতে নেদারল্যান্ডসে বিনিয়োগ বাড়ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, অসঙ্গতি দূর করতে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি সংশোধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস নতুন চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থ সচিব, নেদারল্যান্ডসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স সোনজা কুইপ।
আরও পড়ুন: ইইসি’র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ে বেলারুশের সহায়তা চায় বাংলাদেশ