প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন উদাহরণ সৃষ্টি করবে। এতোদিন নারায়ণগঞ্জে যে পরিস্থিতি ছিল, তার কারণে আমাদের বিভিন্নভাবে দোষারোপ করা হয়। পরবর্তীকালে যে নির্বাচনগুলো হবে সেখানে এই নির্বাচন প্রভাব ফেলবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নাসিক নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখানে দুটো বিষয় কাজ করে। একটা হল প্রার্থীদের নির্বাচনের সময় আচরণ এবং আচরণবিধির প্রতি তাদের আস্থা এবং সম্মান প্রদর্শন। তারপরেই আসে প্রশাসনের ভূমিকা। তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই এই নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়। যারা নির্বাচন কমিশনার আছেন তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।
আরও পড়ুন: নাসিকের প্রার্থীর ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি: মির্জা ফখরুল
তিনি বলেন, এখানে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে , উপজেলা নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো নির্বাচনে আমরা সন্তুষ্ট। আমি আপনাদের সাফল্য কামনা করছি এবং সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনের যে কয়েকদিন বাকি আছে আমার মনে হয় পরিবেশ আরও সুন্দর হবে। প্রার্থীদের এজেন্টদের নিয়ে অনেক সময় কথা ওঠে। এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়না বা তাদের বের করে দেয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যারা আছেন তাদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে রিটার্নিং অফিসার যারা আছেন তারা যেন সকলকে আশ্বস্ত করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে এজেন্টদের উপস্থিতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এজেন্ট পাঠানো হয় না সেটা ভিন্ন কথা। তবে এজেন্টদের প্রটেকশন দেয়া প্রিজাইডিং অফিসারদের দায়িত্ব। যদি ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে কেউ অভিযোগ করেন তাহলে তারা সেটা সুরাহা করবেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের ভোট গণনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেখানে প্রার্থীর এজেন্ট থাকবে এবং আপনাদের কর্মকর্তারা থাকবেন। এটা যেন সকলের সামনে করা হয় এবং নির্ধারিত জায়গায় যেন এজেন্টদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। একেবারে স্বচ্ছভাবে যেন এই ভোট গণনা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভোট গণনার পরে ফল ঘোষণার পর অনেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ সিটি ছোট একটি জায়গা। আমি বিশ্বাস করি এ জাতীয় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি একটি ঐতিহ্যবাহী সিটি। এখানে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে শুধু বিমানবন্দর নেই। এই শহরে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা আছে। যারা ভোটার এবং যারা প্রার্থী তাদের ওপরই ৯০ শতাংশ সুষ্ঠু পরিবেশ নির্ভর করে।
আরও পড়ুন: আসন্ন নাসিক নির্বাচনে আ’লীগের মনোনয়ন চান আইভি
সিইসি বলেন, নির্বাচনের পরে এখান থেকে আমাদের ডিসি ও এসপি সাহেব চলে যাবেন। তারা কিন্তু এখানে শেষ নির্বাচন দেখে চলে যাবেন। এরপরে কিন্তু তারা আর কোনো নির্বাচন দেখার সুযোগ পাবেন না। তারা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনা করবেন বলে বিশ্বাস করি। এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের দেওভোগ এলাকায় মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের হল রুমে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের দিক নির্দেশনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, যারা ভোট দিতে আসবেন তারা মাস্ক পরে আসবেন। নির্বাচনের কাজে সবসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতা। কারণ সকালের দিকে, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখি কেন্দ্রে নারীদের ভিড়। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন না। তখন সম্ভবও হয় না।
এটা এই নির্বাচন কমিশনের শেষ নির্বাচন। কোনো প্রেসার অনুভব করছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, আগেও করিনি, এখনও করি না।
করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা এখনও বলা যাবে না। সেটা পড়ে দেখা যাবে। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে যদি সেটা সিরিয়াস অবস্থা ধারণ করে, তাহলে তখন ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ মুহূর্তে বলা যাবে না।
আরও পড়ুন: সিইসির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে কোনো সমস্যা দেখি না। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো প্রার্থী তাদের সহনশীলতা এবং নির্বাচনের ব্যাপারেও যে আচরণ এটা আমাকে একটাও প্রশ্নবিদ্ধ করেনি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যথেষ্ট রকমের কর্মতৎপরতা আছে। তারা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, মিটিং করেছেন। তারা যখনই যেটা দরকার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। এটাই বাস্তবতা। আমার মনে হয় খুবই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
প্রিজাইডিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে আপনার নিরপেক্ষতা সব থেকে বড় অস্ত্র। একজন সচেতন নাগরিক, শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের একেকটা মত থাকতে পারে, একেকটা ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে, রাজনৈতিক দলের প্রতি সহনুভূতি থাকতে পারে, দুর্বলতা থাকতে পারে। এটা সবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, এটাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। কিন্তু আপনি যখন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন তখন কে কোনো দলের, কে কোনো মতের, কে কোনো ধর্মের কিংবা গোত্রের এটা আপনার মাথায় থাকে না নিশ্চিয়। সেভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমরা সবাই তাই করবো।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তার প্রমুখ।