একইসাথে বিপুল মানুষের যাতায়াতে গণপরিবহনের সংকট মোকাবিলায় এবার ঈদের লম্বা ছুটি সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিমুক্ত, স্বস্তিদ্বায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্র্যাব মিলনায়তনে ‘ঈদযাত্রায় সড়কে ডাকাতি, নগরজুড়ে ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা উত্তোরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সড়কে বাড়তি চাপ কমাতে ও ফিটনেসবিহীন সিটিবাসে পোশাক শ্রমিকদের যাত্রা বন্ধে ২৪ মার্চের মধ্যে তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে ধাপে ধাপে বাড়ি পাঠানো নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রধান সড়ক থেকে ছোট যানবাহন অপসারণের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এবারের ঈদে ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবেন। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হতে পারে, যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে।
পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনারোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
সংগঠনটির পর্যবেক্ষণে মতে, বিগত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। বিগত ৯ বছরে শুধু ঈদুল ফিতরে দুই হাজার ৩৭৭টি দুর্ঘটনায় দুই হাজার ৭১৪ জন নিহত এবং সাত হাজার ৪২০ জন আহত হয়েছেন।
এবারের ঈদে দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন, পুলিশ ও বিআরটিএ’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
৮৩ শতাংশ কোচ ও ৬০ শতাংশ লোকোমোটিভ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতিতে রেল দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতি, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করে হয়রারিমুক্ত রেলসেবা প্রদানের দাবি জানান আলোচনার সভার বক্তারা।
এ সময়ে নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঘাট ও নৌবন্দর কেন্দ্রিক যাত্রী হয়রানি, খেয়া পারাপারে, বন্দরের যাত্রী পারাপারে বেসরকারি ইজারাদারদের লুটপাটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার দাবি উঠে আসে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, সরকারের পরিকল্পনার গলদে নানান অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জন নিহত, আহত ৯৭৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। এবারের ঈদযাত্রায় শ্রমিক ফেডারেশন যাত্রীসাধারণের পাশে থাকবে, যেকোনো অভিযোগ সাথে সাথে আমলে নেবে।
বিআরটিএ’র পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধে বিআরটিএ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ৬৪ জেলায় ভিজিলেন্স টিম তৎপরতা চালাবে। যাত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ভিজিলেন্স টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সড়ক দুর্ঘটনারোধে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বিআরটিএ প্রাণপন চেষ্টা চালাবে। যাত্রী সচেতনতা, পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। তিন হাজার ৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নম্বর সাথে রাখুন। আমাদের কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে। তিনি প্রবাসীদের ঈদে লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে বাড়ি যেতে হাইওয়ে পুলিশের সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান।