পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুজব উপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নতুন পর্যায় সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আল্লার দোহায়, এসব (গুজব) নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে ঘুম নষ্ট করবেন না।’
ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের (পিইএএম) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম... একজন মানুষও আমাদের বলেনি যে ঝড় আসবে। আপনার (গণমাধ্যম) এসব বাবান। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এমনকি অংশগ্রহণমূলক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার শব্দটিও উচ্চারণ করা হয়নি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
নির্বাচনী প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ এবং একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করতে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে এসেছে।
মোমেন বলেন, তারা সফররত এনডিআই-আইআরআই'র যৌথ প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন। আরও বলেছেন, সরকার কোনো সহিংসতা ছাড়াই 'অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ' নির্বাচন করতে চায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তারা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি 'সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি' গড়ে তুলেছেন, যা 'অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী'।
মোমেন বলেন, 'তারা আমাকে কোনো পরামর্শ দেয়নি, তারা আমাদের কথা শুনেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত করতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, তারা গত ১৫ বছরে অর্জিত তুলনামূলক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, কেউ এই সাফল্যকে পরাজিত করতে পারবে না।
ড. মোমেন বলেন, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
মোমেন বলেন, জনগণ যদি অংশগ্রহণ করে এবং অবাধে ভোট দিতে পারে তাহলে তা অংশগ্রহণমূলক।
তিনি বলেন, তারা চায় সবাই নির্বাচনে অংশ নিক, কারণ সরকার পরিবর্তনের একটাই উপায়- তা হলো নির্বাচন।
আরও পড়ুন: কবি আসাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
এর আগে প্রতিনিধি দলের সদস্য দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফার্থ রবিবার বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এনডিআই-আইআরআই যৌথ মিশন নির্বাচনী প্রস্তুতির অবস্থা মূল্যায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের কথা শুনতে এবং একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের সমর্থন দেখাতে এসেছি।
ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন নির্বাচনী স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রতিনিধি দলের সহসভাপতিত্ব করছেন দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফার্থ এবং ইউএসএআইডির সাবেক ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বনি গ্লিক। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রাক্তন সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ; জামিল জাফর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির প্রাক্তন সহযোগী পরামর্শদাতা; এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এনডিআই আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ; আইআরআই-এর এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও রয়েছন দলে।
বনি গ্লিক বলেন, 'এই যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আগ্রহ ও সমর্থনের প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, 'আমরা প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করব। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী বিশ্লেষণ দেব।’
প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের মূল্যায়ন পরিচালনা করবে।
কার্যক্রম শেষে প্রতিনিধিদল তাদের মূল অনুসন্ধান, নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ এবং নির্বাচনের প্রতি নাগরিকদের আস্থা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহারিক সুপারিশের একটি বিবৃতি প্রকাশ করবে।
এনডিআই ও আইআরআই হলো নির্দলীয়, বেসরকারি সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চার প্রতি সমর্থন ও শক্তিশালী করে।
প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
আরও পড়ুন: ই-কোয়ালিটি সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ইনোভেশনের উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী