নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উন্নয়নে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথসমূহ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে হাইড্রোগ্রাফিক চার্ট প্রণয়ন, নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর স্যাটেলাইট ভিত্তিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিফারেন্সিয়াল গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (ডিজিপিএস) স্টেশন আরও স্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন: নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিব: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
এছাড়া বর্তমানে তিনটি ডিজিপিএস স্টেশন রয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বুধবার যশোরের মনিরামপুরে ডিজিপিএস বিকন স্টেশন পরিদর্শন এসে এসব কথা বলেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক, মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, বিআইডব্লিউটিএ'র হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের পরিচালক সামসুন নাহার বেগম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। করোনায় কিছুটা সমস্যা হলেও সাড়ে তিন হাজার কিলোভমটার নৌপথ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বিআইডব্লিউটিএর ৪১টি নদীবন্দর আপগ্রেড করা হচ্ছে।
শুধু বিআইডব্লিউটিএ'র আপগ্রেড নয়; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে সমগ্র বাংলাদেশ আপগ্রেড হয়ে গেছে। আজ মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরেক উচ্চতায় চলে গেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে।
২০১৪ সালে দারিদ্রতাকে জয় করেছি। ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ উন্নত দেশে পরিণত হবো।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীর প্রবাহ ও নৌপথ সচল রাখতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। কেউ যাতে নদীর ক্ষতি, দখল ও দূষণ করতে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী জাগরণ তৈরি করেছেন। নদী নালা খাল বিল রক্ষায় সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উন্নয়নে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ:
প্রতিমন্ত্রী এর আগে নওয়াপাড়া নদী বন্দর টার্মিনাল ভবনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উন্নয়নে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নওয়াপাড়া নদী বন্দর সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত ড্রেজিং করছে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নিব। নওয়াপাড়া শিল্প এলাকাকে বাঁচাতে চাই। ভৈরব নদীকে রক্ষা করতে চাই। ব্রিজ তৈরি করে নদীকে হত্যা করতে দেয়া হবে না। নদীতে ব্রিজ তৈরিতে বিআইডব্লিউটিএ'র হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।
উল্লেখ্য, সঠিকভাবে জরিপ কাজের লক্ষ্যে ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ১৯৬৫ সালে ডেকা চেইন সিস্টেম স্থাপন করা হয়। উক্ত সিস্টেমে চাঁদপুরের সেনগাঁওয়ে একটি মাস্টার স্টেশন, তিনটি স্লেভ স্টেশন যথা-যশোরের মনিরামপুর, ময়মনসিংহের রূপচন্দ্রপুর, চট্টগ্রামের দোহাজারী এবং একটি মনিটরিং স্টেশন-নারায়ণগঞ্জ এর সমন্বয়ে গঠিত। উক্ত স্টেশনগুলির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের নদী জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হতো। ডেকা চেইন সিস্টেমের একুরিসি ছিল ০২(দুই) মিটার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২০০০ সালে স্যাটেলাইট ভিত্তিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিজিপিএস স্থাপন করা হয়। উক্ত সিস্টেমের আওতায় তিনটি স্লেভ স্টেশনকে তিনটি ডিজিপিএস বিকন স্টেশন যথাক্রমে-যশোরের মনিরামপুর, ময়মনসিংহের রূপচন্দ্রপুর, চট্টগ্রামের দোহাজারীতে ও ঢাকা সদরঘাটে একটি মনিটরিং স্টেশন এবং একটি কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করা হয়। বর্তমানে উল্লিখিত স্টেশনগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিফারেন্সিয়াল গ্লোবাল নেভিগেশনাল স্যাটেলাইট সিস্টেম (ডিজিএনএসএস) স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ র্নিমাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিএ। বর্তমান সরকারের নৌপথ পুনরুদ্ধার, পুনরুজ্জীবিতকরণ, ও সম্প্রসারণের মহা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ বরাবরই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আসছে। বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে চার হাজার ৮০০ কিলোমিটার এবং বর্ষা মৌসুমে পাঁচ হাজার ৬০০ কিলোমিটার শ্রেণিবিন্যাসকৃত নৌপথ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রোটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় প্রোটোকল রুটগুলো হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ও ড্রেজিং কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমগ্র বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নৌপথের নিরাপদ যাত্রা এবং নৌপথের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও কয়েকটি বিকন স্টেশন স্থাপন করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ৩টি মেরিন একাডেমি স্থাপন করা হবে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী