মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর বিষয়ে ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে আবারও ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ জন্য তাদের আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেই সাথে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ অক্টোবর তারিখ রেখেছেন আদালত।
যে দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে হবে তারা হলেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী গোলাম মোস্তাফাকে ধার্য তারিখের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: পরীমণির গাড়িসহ জব্দ করা ১৬ আলামত ফেরত দেয়ার সুপারিশ
পরীমণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ উল্লেখ করে আগে দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের দেয়া ব্যাখ্যা গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তাদের দেয়া ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি হাইকোর্ট। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রাখেন। সে অনুসারে আজ বিষয়টি ওঠে।
পরে তাদের পক্ষে সময় চেয়ে আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট। রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করা হয়। কী কারণে রিমান্ড দেয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। শেষে বলা হয়েছে, সার্বিক বিবেচনায় দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশে ত্রুটি -বিচ্যুতি...।’
এই পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘তারা (দুই বিচারক) আমার অফিসে এসেছিলেন। দুজনই তরুণ বিচারক। তারা অনুতপ্ত, দুঃখিত। প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে যথাভাবে জবাব লেখা হয়নি। দুজনই আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।’
আদালত বলেন, ‘ক্ষমা; তাহলে তারা (দুই বিচারক) আরেকটি ব্যাখ্যা (রিপ্লাই) দেবেন। এ জন্য সময় দিচ্ছি। বিষয়টি ২৪ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য আসবে।’ এ সময় আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ-নির্দেশনা যেন নিম্ন আদালত মেনে চলেন।
পড়ুন: পরীমণির রিমান্ড: দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট
আদালতের আদেশ অনুসারে আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী গোলাম মোস্তাফাকে ধার্য তারিখের মধ্যে (২৪ অক্টোবর) ব্যাখ্যা দিতে বলেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান শুনানিতে ছিলেন।
মামলায় জামিন আবেদনের শুনানির দিন দেরিতে নির্ধারণ করা নিয়ে জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন পরীমণি।
গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট পরীমণিকে জামিন না দিয়ে তার আবেদন শুনানি প্রশ্নে রুল জারি করেন। রুলে রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির জামিন আবেদন আদেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া পরীমণির জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে নিম্ন আদালতের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশের আলোকে গত ৩১ আগস্ট পরীমণিকে জামিন দেন বিচারিক আদালত।
পড়ুন: ফোনে আড়িপাতা রোধে করা রিট খারিজ
এর আগে গত ৫ আগস্ট পরীমণি ও দীপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ। পরে দ্বিতীয় দফায় গত ১০ আগস্ট পরীমণি ও আশরাফুল ইসলাম দীপুর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। এরপর তৃতীয় দফায় গত ১৯ আগস্ট পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম।
পরে গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রায় না মেনে মাদক মামলায় আটক চিত্রনায়িকা পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে নেয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের স্ব-প্রণোদিত আদেশ প্রার্থনা করে একটি আবেদন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন এ আবেদন জানান।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুরকারী বিচারকদের ব্যাখ্যা ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
গত ৪ আগস্ট পরীমণিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন র্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান।