প্লাস্টিক ব্যবহারের ভয়াবহতা ও পরিবেশ রক্ষার আহ্বান নিয়ে ভারতের ২৭টি রাজ্য ঘুরে বাংলাদেশে এসেছেন রোহান আগারওয়াল নামের এক ভারতীয় যুবক। নিজ দেশের ২৭টি রাজ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা শেষে তিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে ফেনীর বিলোনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৩টি জেলা ঘুরে সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে দিনাজপুরের হিলিতে আসেন তিনি। এরপর তিনি হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালান।
রোহান আগারওয়াল জানান, ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গা নদীর তীর থেকে পায়ে হাঁটা শুরু করি। সেখান থেকে নিজ দেশের রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চন্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়াসহ ২৭টি রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনবহুল এলাকা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্লাস্টিক-পলিথিনের ক্ষতিকারক দিক ও ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছি।
এছাড়া পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছি।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশে আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ৩৩টি জেলায় প্রচারণা চালান রোহান। এরপর সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে হিলিতে আসেন।
রোহান আগারওয়াল আরও জানান, এই যাত্রায় আমি ১৫ হাজার কিলোমিটার হেঁটেছি এবং কখনও কখনও লিফটও নিয়েছি। আমি ৯০ দিনে ভারতের ২৭টি রাজ্য এবং বাংলাদেশের ৩৩টি জেলা কভার করে ৮৬০ দিনেরও বেশি ভ্রমণ করেছি।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সাংবাদিকদের সফর দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেবে: তথ্যমন্ত্রী
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, এই যাত্রা শুরু করার মূল উদ্দেশ্য হল প্লাস্টিকের বিপজ্জনক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেয়া। আমি ভারত ও বাংলাদেশের অনেক স্কুল ও ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছি এবং তারপর আমি সাইবেরিয়ার ওমিয়াকোমে হেঁটে যাব। যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান। আমার আশা আমিই দক্ষিণ এশীয় হিসেবে প্রথম স্থলপথে সেখানে পৌঁছাব। সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে পাঁচ বছরে আমার দক্ষিণ এশিয়ার ২০টি দেশ অতিক্রম করার ইচ্ছা আছে।
এদিকে, সোমবার রাতে দিনাজপুরের হিলিতে পৌঁছালে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, আকতার হোসেন বকুল, আব্দুল আজিজ, মোসলেম উদ্দিন, লুৎফর রহমান ও সোহেল রানা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রোহান জানান, নাগপুরে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারে তার মা-বাবা ও ছোট বোন রয়েছে। পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য নয়। প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্যও পৃথিবী। প্লাস্টিক থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতেই আমার এই যাত্রা। তাই ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছি।
তিনি বলেন, এছাড়া পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। বাংলাদেশের যেখানেই গেছি, সেখানকার স্কুল-কলেজে গেছি, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গেছি। সবাইকে পরিবেশের সুরক্ষার কথা বলেছি। বাংলাদেশের মানুষ আন্তরিক ও ভালো। কেউ কোনোদিন জানতে চায়নি, আমি কোন ধর্মের। মানুষ হিসেবে সবাই ‘হেল্প’ করেছে। আই লাভ বাংলাদেশ।
তিনি আরও জানান, আমি ভারতের গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাংলাদেশের পর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও ও মঙ্গোলিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ভারতীয় এই শিক্ষার্থীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য আমাদের জীবনে ও পরিবেশের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছে। এর ফলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমি মনে করি রোহানের এই প্রচারণা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তার এই পথচলায় সবার এগিয়ে আশা দরকার।
তাহলে হয়তো একদিন প্লাস্টিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় সীমানা পেরিয়ে দুই যুবকের ভারতে প্রবেশ, ফিরিয়ে আনল বিজিবি
চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রঘুরে দেখলেন ৩৮ ভারতীয় ট্যুরিস্ট