সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল।
একইসঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় নতুন একটি সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (১৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের ১২ বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত: প্রধান বিচারপতি
এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন এই প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বক্তব্য রাখেন নির্বাচনে এই পানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।
এদিকে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচন ‘একতরফা হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচনে আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থিতরা ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেননি। রবিবার (১৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
এ সময় সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলালসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তিনি বিএনপির গণতন্ত্র বিরোধী, ভোট বিরোধী, নির্বাচন বিমুখ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুসকে দায়ী করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন সাব-কমিটি পুনর্গঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার জন্য জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা যখন প্রতিবাদ জানান তখনই আইনমন্ত্রী-অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে আওয়ামী সমর্থিত সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী ক্ষমতার দাপটে শতশত পুলিশ নিয়ে গত ১৫ই মার্চ সমিতির অডিটরিয়ামে প্রবেশ করে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
তারা আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। পুলিশি আক্রমণে সমিতির সভাপতি প্রার্থী খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার কাজলসহ শতাধিক আইনজীবী আহত হন। নারী আইনজীবারাও পুলিশি আক্রমন নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি।
পেশাগত দায়িত্ব পালনরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে বেদম প্রহার করে গুরুতর আহত করা হয়।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান কার্যকরী কমিটির ছয় জন সদস্য সর্বসম্মত নির্বাচন সাব-কমিটির দুই জন সদস্যসহ মোট চৌদ্দ জন অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারী মামলা করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নারকীয় তাণ্ডব আইনজীবী হিসেবে সমাজের কাছে আমাদেরকে হেয় করেছে।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ বিচারপতির নিয়োগ
এটা শুধুমাত্র আইনজীবী সমাজেরই না, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত ১৫ ও ১৬ই মার্চ, ২০২৩ ইং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এ নির্বাচনকে ঘিরে বিজ্ঞ আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, দেশের অন্য সকল নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আইনগতভাবে কোনও নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের আইনের আশ্রয় নেয়ার শেষ ভরসাস্থল, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীদের সমিতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।
এতে বলা হয়, এই সমিতি নির্বাচনের জন্য বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সমিতির কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও অবৈধ সম্পাদক, যে গতবছর সমিতির নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মো.রুহুল কুদ্দুস (কাজল)-কে নির্বাচিত হওয়ার ৪২ দিন পর পুলিশ বহিরাগতদের সহায়তায় সম্পাদকের দপ্তর অবর-দখল করে নেয়। ভোট কারচুপির মাধ্যমে একতরফাভাবে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রথমে একতরফাভাবে একটি ভগ্নীবাহক নির্বচন সাব-কমিটি গঠন করে।
অর্থ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের রুল ২২ মোতাবেক কার্যকরি কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন সাব-কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। বর্তমান কার্যকরি কমিটিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঘোর সমর্থিতরা সংখ্যার এক পর্যায়ে সাধারণ আইনজীবীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ইতোপুর্বে দলীয় অনুগত নির্বাচন সাব-কমিটির আহবায়ককে পরিবর্তন করে সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো. মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।
যদিও তিনি একজন আওয়ামী লীগের সিনিয়র তো আমীনী প্রার্থী ছিলেন তথাকথিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ওই প্যানেলের সদস্যরা তার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলেন।
তিনি একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত।
তিনি সহ সাব-কমিটি সর্বসম্মতভাবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা করেছিলেন। ইলেক্ট্রনিক কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। সেই মোতাবেক মেশিনে গণনার জন্য ব্যালট পেপার ছাপিয়েছিলেন।
গত ১৩ ই মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রার্থী পরিচিত সভা পরিচালনা করেন। যেখানেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি বুঝতে পেরে প্রার্থী পরিচিতি সভা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী তাকে দিয়ে তাদের সরবরাহকৃত ব্যালটে ভোট গ্রহণ ও অনৈতিক ভোট ডাকাতির ফলাফল ঘোষণায় রাজি করাতে না পারলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং তাদের একান্ত অনুগত একজন দলীয় আইনজীবীকে দিয়ে নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার আয়োজন করে।
চলমান ঘটনা নিয়ে তারা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছেন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী একাধিকবার প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া পুলিশের তাণ্ডবে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে। ‘এরপরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। পুলিশি তাণ্ডবের কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার হয়নি। আমাদের দুঃখ, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।’
আরও পড়ুন: বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ উদ্বোধন
নতুন নির্বাচন দাবি করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলেন, অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি।