যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর আরোপিত শুল্কহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই হার যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ, যেমন: শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার ১৯ থেকে ২০ শতাংশের সমতুল্য। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অপরিবর্তিতই থাকছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারিত হয়েছে।
এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সে সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।
ওই মেয়াদ শেষে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে টানা তিন দিন আলোচনা করে। এরপরই নতুন শুল্ক নির্ধারিত হলো।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে গড় শুল্কহার ১৫ শতাংশ। এবার নতুন ২০ শতাংশসহ মোট শুল্ক দাঁড়াল ৩৫ শতাংশে।
আরও পড়ুন: শুল্ক আলোচনা: বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও অগ্রগতির দেখা নেই
শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। ১৫ শতাংশ শুল্কহার কমানোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম।’
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যতম প্রধান আলোচক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক শিল্প এবং পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জন্য স্বস্তির খবর। সেই সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও ধরে রেখেছি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর নতুন সুযোগ তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি যাতে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে রক্ষা করা। এর পাশাপাশি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি এটি মার্কিন কৃষিপ্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে।’
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ (স্থানীয় সময় ৩১ জুলাই) এক ঘোষণায় ৭০টি দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্কহার প্রকাশ করেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্ত সময়সীমা, অর্থাৎ ১ আগস্টের ঠিক আগে এই ঘোষণাটি দেওয়া হলো।
এই চুক্তিগুলো কেবল শুল্ক সমন্বয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী বলে বিবেচিত দেশীয় নীতির সংস্কারও এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও এ সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আলোচনার অংশ হিসেবে দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হয়েছিল যাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায়। চুক্তিগুলোতে বিষয়বস্তু বিস্তৃত হওয়ায় আলোচনা প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও দীর্ঘ।
শুক্রবার (১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, এই শুল্কছাড় কেবল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সঙ্গে নয়, বরং অ-শুল্ক বাধা, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত মার্কিন উদ্বেগের প্রতি একটি দেশের সদিচ্ছাও এর সঙ্গে জড়িত ছিল।
আরও পড়ুন: কানাডায় ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, অনিশ্চয়তায় ইউএসএমসিএ চুক্তি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট করা হয়, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার নির্ভর করবে এসব ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতির গভীরতার ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলংকার ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।