প্লাস্টিক দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনেও গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তিকে সমর্থন করবে।’
শনিবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) একটি ভার্চুয়াল হাই লেভেল পলিসি ডায়লগে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বরাবরই আগের অধিবেশনগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং আগামী ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলির পঞ্চম অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ করবে। আমরা আশা করছি যে, সারা বিশ্বের দেশগুলো একটি বৈশ্বিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করবে, যা ইন্টারগভর্নমেন্টাল আলোচনা কমিটির প্লাস্টিক দূষণের ওপর ইউনিয়া ৫২ চুক্তিকে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবনাকে পরিচালিত করবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (সিআইইএল) জেনেভা ম্যানেজিং অ্যাটর্নি ডেভিড আজৌলে’র মতে, ‘বাংলাদেশ সরকারকে আসন্ন জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনে আলোচনার জন্য মাছ ধরার সরঞ্জাম ও টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত সস্তা প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষভাবে ফোকাস করতে হবে। এনভায়রনমেন্ট ইনভোস্টগেশন এজেন্সি – ইআইএ এর অ্যাটর্নি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত আইনজীবী টিম গ্রাবিয়েল বিশ্ব প্লাস্টিক চুক্তির জন্য জাতীয় হস্তক্ষেপের উপর দৃষ্টি আরোপ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের মহাসাগর নীতি ও অর্থনীতির অধ্যাপক প্রফেসর স্টিভ ফ্লেচার কীভাবে এই চুক্তি, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে পারে তার ওপর জোর দিয়েছেন। আইপেনের নীতি ও প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা ভিটো এ বুসান্টে বিশ্ব প্লাস্টিক চুক্তি এবং প্লাস্টিকের বিষাক্ত প্রভাবের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এবং মো. জিয়াউল হক, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তার মূল্যবান বক্তব্য শেয়ার করেছেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘একক উদ্যোগ বিশ্ব সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। আমাদের উচিত অন্যান্য দেশগুলো এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখা এবং গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি পরিপূর্ণ করার জন্য এক সঙ্গে কাজ করা।’
তিনি এসডোর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এখনি সময় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির ইউনিয়া ৫ নিয়ে আলোচনা করার।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো যেমন, নর্ডিক, ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকান অঞ্চলগুলো উচ্চ-স্তরের মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার সাথে যোগ দিচ্ছে। তাই, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের কনভেনশন এ একলা থাকছে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, 'এটা সত্যিই চিন্তার কারণ যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক-দূষিত দেশ। প্লাস্টিক তৈরির কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব সবারই জানা, কিন্তু বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কারণ এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, সমাধানটিও বিশ্বব্যাপী হতে হবে।
ইউনাইটেড নেশনসের মতে, ১২৭ দেশ প্লাস্টিক ব্যাগগুলোর সিঙ্গেল ব্যবহারের ওপর আইন পাস করেছে যাতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন: ইএইএ, সিএইইএল, গায়া, এসডো, বিএফএফপি আইপেন, আর্থওয়ার্ক ইত্যাদির থেকে একটানা উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে কেনাকাটা করার সময় ভোক্তাদের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে। একটি আন্তর্জাতিক আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি যা প্লাস্টিকের সমগ্র জীবনচক্রকে সম্বোধন করে, কাঁচামাল নিষ্কাশন থেকে উত্তরাধিকার প্লাস্টিক দূষণ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আইনত যে বাধাগুলো আছে তা সম্বোধন করে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে আমাদের প্লাস্টিক দূষণের ওপর একটি কনভেনশন দরকার।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, মো. আব্দুস সামাদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; আফরোজা বেগম পারুল, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (বিএসএফআইসি), শিল্প মন্ত্রণালয়; মো. জিয়াউল হক, পরিচালক, ঢাকা অঞ্চল, পরিবেশ অধিদপ্তর; আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; টিম গ্রাবিয়েল, অ্যাটর্নি এবং পরিবেশ আইনজীবী, পরিবেশগত তদন্ত সংস্থা – ইআইএ ইউকে; ডেভিড আজৌলে, জেনেভা ম্যানেজিং অ্যাটর্নি, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল (সিএইইএল), জেনেভা, সুইজারল্যান্ড; স্টিভ ফ্লেচার, রেভোলিউশন প্লাস্টিকের পরিচালক, পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য; ভিটো এ. বোনসান্টে পলিসি।
ইউনিয়া ৫.২ এবং এসডো
ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া) হলো বিশ্বের পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি প্রতি দুই বছর পর পর নাইরোবিতে মিলিত হয় পরিবেশের জন্য নীতি নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের জন্য। এতে সারা বিশ্বের নীতিনির্ধারক, শিল্প, বিশেষজ্ঞ এবং এনজিওরা অংশগ্রহণ করেন। ইউনিয়া একটি বিশেষ গ্রুপের মাধ্যমে কীভাবে সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা করা যায় তা আলোচনা করছে (একটি অ্যাডহক ওপেন-এন্ডেড এক্সপার্ট গ্রুপ নামে পরিচিত)। একটি ম্যান্ডেটসহ সমস্ত উৎস থেকে সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিকল্পগুলি আলোচনা করা হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি- ২ মার্চ ২০২২ এ অনুষ্ঠিত ৫তম অধিবেশন (ইউনিয়া-৫) এ বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর কাছে উপস্থাপিত বিকল্পগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন বিশ্ব কাঠামোতে একমত হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ বিশ্ব গড়তে এখনই উদ্যোগী হতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
এসডো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অর্গানাইজেশনগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ওপর বাংলাদেশ সরকার আইন জারি করে। ইউনিয়া ৫.২, এর সদস্য দেশগুলো এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য সাস্টেনিবিলিটি প্র্যাক্টিস করার বড় একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে।