বগুড়ার শাজাহানপুরে প্রতারক চক্রের খপ্পর থেকে পালাতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য খুন হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৭টার দিকে উপজেলার কৈগাড়ী পূর্ব পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জাকির হোসেন (৪৫) উপজেলার শাকপালা ক্যান্টনমেন্ট পাড়ার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাচিয়াখালী গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে অভিযান চালিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হত্যাকাণ্ডে ব্যবহত চাকুসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার হওয়া দুইজন হলো-মৃত মিলনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশা (২৪) ও শহিদুল ইসলাম খোকনের ছেলে মোস্তফা কামাল ওরফে কমল (২৫)। তারা উভয়ে শাজাহানপুরের কৈ-গাড়ী পূর্বপাড়ার বাসিন্দা।
শনিবার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্যপদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার) আলী হায়দার চৌধুরি এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গ্রেপ্তার দুইজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের হালদা নদীতে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
এসময় গ্রেপ্তাররা জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে দীর্ঘদিন যাবত তাদের নারী সদস্যদের দিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। নানা উপায়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে নারী সদস্যদের দিয়ে ভুক্তভোগীদের একটি বাসাবাড়িতে ডেকে নিতেন।
এরপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে চক্রটির নারী সদস্যের আপত্তিকর ছবি তুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জাকিরকেও ঠিক একই কায়দায় ফাঁদে ফেলে চক্রের নারী সদস্য আঁখি (ছদ্মনাম) ও সালমা (ছদ্মনাম) কৈ-গাড়ী জবান স্কুলের পাশের একটি ভাড়া বাসায় ডেকে নেন।
এরপর নারী সদস্যরা কৌশলে অনান্য সহযোগীদের মুঠোফোনে মিসডকল দিয়ে ভেতরে যাওয়ার সিগনাল দেয়।
গ্রেপ্তার দুইজনসহ চক্রের অন্য সদস্যরা এসময় বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে জাকিরকে আটক করে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে হুমকি দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তারা জাকিরের কাছে থাকা নগদ দুই হাজার ৩০০ ও ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে উঠিয়ে নেয়।
এরমধ্যে জাকির সুযোগ বুঝে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আশরাফুল তাকে ধাওয়া করে ছুরিকাঘাত করেন। এসময় চক্রের সদস্যরা অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাকিরকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খুন হওয়া জাকিরের ব্যবহত মুঠোফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।
এই ঘটনায় তার স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে শাজাহানপুরে মামলা দায়ের করেছেন।
জাকির হত্যায় প্রতারক এই চক্রটির আট সদস্য সরাসরি জড়িত। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেপ্তার আশরাফুলের বিরুদ্ধে এর আগেও অস্ত্র আইনে একটি মামলা চলমান আছে। গ্রেপ্তার দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, শাজাহানপুর থানা পুলিশের ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলা ডিবি পুলিশের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) সাইহান ওলিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।