রবিবার নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যে এক ও অভিন্ন তা পুরস্কারের শিরোনামে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এই পুরস্কার বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’
গত ১১ ডিসেম্বর ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনের প্রথম পর্ব শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সৃজনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করল ইউনেস্কো
ইউনেস্কোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিক্ষেত্র ‘সংস্কৃতি’। সমসাময়িককালে বহুল আলোচিত ও চর্চিত বিষয় ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’ অঙ্গনে আন্তর্জাতিক এই পুরষ্কার প্রবর্তিত হয়েছে। পুরষ্কারটি সৃজনশীল অর্থনীতিতে যুব সমাজের উন্নয়নে সংস্কৃতিকর্মী, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেবে।
বাংলাদেশ যখন নানা আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
ইউনেস্কোর কার্যনির্বাহী বোর্ডের ২১০তম সভা দুটি বিভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দফায় ২-১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভার্চুয়ালি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মোমেন বলেন, এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো অঙ্গসংস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করল।
‘আমরা সবাই এটি নিয়ে খুব গর্বিত,’ বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট ইউনেস্কোর মূলনীতি শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরিতে সংস্কৃতি শক্তিশালী উপাদান যা বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত সম্বলিত নথিটি ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি স্মরণে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত
শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে সংস্কৃতির শক্তিতে বিশ্বাস রেখে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার’ শীর্ষক একটি পুরস্কার প্রবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপন করে বাংলাদেশ।
ড. মোমেন জানান, ২০১৯ সালের আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠায় এবং তার অনুমোদনের পর এটি প্যারিসে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে ইউনেস্কোর কাছে প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতি দুই বছর অন্তর এ পুরস্কার প্রদান করা হবে যার অর্থমান ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ পুরস্কারটি প্রথমবারের মতো ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালে প্রদান করা হবে।
এই পুরষ্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সম্পৃক্ত হলো ইউনেস্কো।
আরও পড়ুন: লন্ডন মিশনে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ‘বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জ’ উদ্বোধন
এর আগে, ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি তথা প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩টি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তিত রয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের কোনো প্রথিতযশা সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামে ইউনেস্কো একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করল।
বোর্ডের যে সকল সদস্যরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে তাদের প্রতি গভীর প্রশংসা জানিয়েছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।
বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতার প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং বিশ্বাস করে, অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা ও জোরদার করার মাধ্যমে তারা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবে।
বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ইউনেস্কোর কার্যনির্বাহী বোর্ড শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতভাবে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর, ঢাকায় কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য নির্মাণ করবে তুরস্ক
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর প্রোগ্রাম অ্যান্ড এক্সটার্নাল রিলেশন কমিশন এবং অর্থ ও প্রশাসনিক কমিশনের যৌথ সভায় বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়। যৌথ কমিশন পূর্ণাঙ্গ সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করেছিল যা অবশেষে গৃহীত হলো।
এছাড়া ইউনেস্কো তাদের বৈশ্বিক অগ্রাধিকার লিঙ্গভিত্তিক সমতার সাথে সঙ্গতি রেখে সৃজনশীল অর্থনীতিতে নারীদের উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তারও স্বীকৃতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করার মাধ্যমেও ইউনেস্কো বাংলাদেশকে সম্মানিত করে।
আরও পড়ুন: মুজিববর্ষে বিশেষ হাতঘড়ি উন্মোচন করল ভারত
এছাড়া ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এবং সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এবং বাউল গান, জামদানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও শীতল পাটিকে বিশ্ব অপরিমেয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে সুপরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে।