বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক মর্টার শেল গোলাকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
নিউইয়র্কের হোটেল লোটে ৭৭তম ইউএনজিএ-তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচী নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে না।
তিনি বলেন, ‘ওই এলাকার সীমান্ত এলাকাটি খুব ক্রিসক্রসড। কখনও কখনও সীমান্ত বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে…, সেই কারণে তারা আমাদের সীমান্তের ভেতরে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলা বর্ষণ করছে না, আমাদের সীমান্তের ভেতরে যে এক-দুটি গোলা পড়েছে তা ভুলবশত পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা সতর্ক থাকবে।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ পুরো সীমান্ত সিল করে দিয়েছে এবং নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবে না।
আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের স্থলমাইন বিস্ফোরণে যুবক আহত
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন খুব শক্ত অবস্থানে আছি, আমরা আমাদের সীমান্ত সিল করে দিয়েছি যাতে নতুন কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইতোমধ্যে কিছু নতুন রোহিঙ্গা চীন এলাকায় চলে গেছে, আমাদের দিকে আসার সাহস করেনি।
বাংলাদেশে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ: বিদ্রোহীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা রাষ্ট্রদূতের
শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারে ইউএনএইচসিআরের তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
জবাবে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, তিনি শিগগিরই মিয়ানমার সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই কেবলমাত্র তাদের সংকট সমাধান করা যেতে পারে।
ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনারও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষন করেন।
বৈঠকে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও ভাষানচরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় আরাকান আর্মি ও আরসার ওপর দায় চাপাল মিয়ানমার
পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম এ এ খান কিউসি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তারা বাংলাদেশ ও আইসিসির মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আইসিসির প্রসিকিউটরকে আশ্বস্ত করেছেন যে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইসিসিতে চলমান সকল প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান আগামী বছরের শুরুতে আবারও বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘ-হ্যাবিট্যাটের নির্বাহী পরিচালক মায়মুনাহ মোহাম্মদ শরীফও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের টেকসই নগরায়নের পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার সব সময় একই দাবি করে: ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব