কানাডার রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট কানাডার (সিআরআরআইসি) সহযোগিতায় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা (বিসিবিএস) ‘ডিনায়াল অ্যান্ড রেকগনিশন: দ্য কেস অব বাংলাদেশ জেনোসাইড’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করে।
কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস (সিএমএইচআর) কর্তৃক ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও প্রদর্শনের বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, কানাডায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিসিবিএস’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. খলিলুর রহমান, কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ও পরিচালক অধ্যাপক ড. অ্যাডাম মূলার, কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসের কিউরেশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ড. জেরেমি ম্যারন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), রোটারি পিস ডে’র প্রতিনিধি গ্যারি সেনফ্ট, বিংহামটনের স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের ভিজিটিং স্কলার ড. তাওহীদ রেজা নূর এবং সিআরআরআইসি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. হেলাল মহিউদ্দিনসহ কয়েকজন গণহত্যার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন এজেন্ডা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেমিনার
মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং একটি জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সংগঠিত এই সহিংসতার ব্যাপকতার কারণে এর বৃহত্তর স্বীকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, একাত্তরের ভয়াবয় অভিজ্ঞতা এখনো আমাদের জাতির সম্মিলিত স্মৃতিতে প্রোথিত এবং এর প্রভাব একটি প্রজন্মকে আঘাত করেছে।
তিনি বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ইন কানাডা (বিসিবিএস), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায়টি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং গণহত্যার প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করার জন্য সিএমএইচআরকে অনুরোধ করেন।
কি-নোট বক্তব্যে অধ্যাপক ডক্টর অ্যাডাম মুলার গণহত্যার যারা শিকার হয়েছেন তাদের পরিচিতি গঠনে ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে স্বীকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার প্রত্যাখ্যান যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর শিকার হয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি অপরাধীদের দায়মুক্তির ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, শাস্তি ও জবাবদিহি ভবিষ্যতের গণহত্যা প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি এবং এক্ষেত্রে দায়মুক্তি ভবিষ্যৎ গণহত্যার ক্ষেত্রে অনুঘটক।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকায় এসডিজি সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন আজ
কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধি জেরেমি ম্যারন গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অস্বীকার এবং বিকৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি তাদের ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ গ্যালারিতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা সম্পর্কিত নতুন বিষয়বস্তু তৈরির জন্য জাদুঘরের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অতীতের গণহত্যাকে অস্বীকার করলে তা ভবিষ্যতে তাদের পুনরাবৃত্তিতে ইন্ধন যোগায়।
৭১’ এর গণহত্যার বিশ্বব্যাপী প্রচার ও স্বীকৃতির জন্য তিনি কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটসকে অতি দ্রুত ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ গ্যালারি উন্মুক্ত করতে অনুরোধ করেন এবং এই উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সহযোগী সকল সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
ওয়েবিনারে উপস্থিত সকল বক্তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত ১৯৭১ সালের ভয়াবহতাকে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা বলে চিহ্নিত করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের নৃশংসতা যাতে আর না ঘটে সেলক্ষ্যে কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস এই ইতিহাস দ্রুত প্রদর্শনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার