বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জৈব জ্বালানির পরিমাণ বাড়াতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের জন্য জ্বালানি বৈচিত্র্য, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের কৌশল গ্রহণ করে কাজ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শনিবার (২২ জুলাই) ভারতের গোয়ায় জি-২০ উপলক্ষে ‘এনার্জি ট্রানজিশন মিনিস্টারিয়াল মিটিং’-এ বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ১ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও জাতীয় গ্রিডে আসছে ৮২৫ দশমিক ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০টি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১ হাজার ২৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও ৮ হাজার ৬৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাইপলাইনে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৯৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন: নসরুল
তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট প্রায় ৯ হাজার ৯৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন পাইপলাইনে রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এসময় ভারতের বিদ্যুৎ, নতুন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিমন্ত্রী আর কে সিং, ব্রাজিলের খনি ও জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্দ্রে সিলভেরা ডি অলিভেরা, ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি ও খনিজসম্পদমন্ত্রী আরিফিন তাসরিফ, কপ২৮ এর সভাপতি (মনোনীত) ড. সুলতান আল জাবের, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সভায় বক্তব্য দেন।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ৬০ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী দুই কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
সৌর মিনি-গ্রিডের মাধ্যমে অফ-গ্রিড এলাকায় গ্রিড মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং ৭টি সোলার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১ লাখ বায়োগ্যাস প্লান্ট আছে। ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি বায়ুসম্পদ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত আমলের মতো দিনে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হলে এখন কি হতো: নসরুল
তিনি বলেন, পাঁচটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২৪৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমন্বিত জ্বালানি এবং পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানেও গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর, বায়ু ও হাইড্রো ইত্যাদি), পারমাণবিক, বিদ্যুৎ আমদানি (হাইড্রো), হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া, সিসিএস (কার্বন ডাই অক্সাইড) ক্যাপচার অ্যন্ড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট-এর পরিকল্পনা।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হারিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই সাহসী পদক্ষেপ সবুজ ও পরিষ্কার জ্বালানির প্রতি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। তবে একটি ঘনবসতিপূর্ণ জাতি হিসেবে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধরন অনেক উন্নত দেশের থেকে আলাদা এবং বেস-লোড পাওয়ার হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ অনুপযুক্ত।
তিনি বলেন, সৌর প্রকল্পের জন্য জমির অভাব একটি বড় বাধা। এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং গবেষণা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি; বিশেষ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়ু শক্তির জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই সরকার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।
আরও পড়ুন: ২ সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে: নসরুল হামিদ