বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী দিহিদার (৫৩) ও আওয়ামী লীগ কর্মী শুকুর শেখকে (৪২) হত্যার দায়ে ওই ইউনিয়নের বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় গলা কেটে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন-আবুয়াল ফকির, মো. হুমায়ুন হাওলাদার, মিল্টন খান, মো. মফিজ খান, মো. ফারুক, মো. আবুল হোসেন শেখ, মো. মোদাচ্ছের শেখ, সুনীল দাস, বিশ্বনাথ ওরফে বিশ্ব প্রমাণিক, মো. লিয়ন শিকদার, সুব্রত কুমার সাহা ওরফে পল্টু (পলাতক), মেহেদী ওরফে রুবেল ফকির ও মো. মহি মোল্লা।
আদালতে এ মামলার ৫০ জন আসামী উপস্থিত ছিল।
রায় ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহত আনসার আলী দিহিদারের ছেলে মেহেদী হাসান শাওন।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকিরসহ আমার বাবা-মার হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আপিল করা হবে।
আমরা এ রায়ে মোটেও সন্তুষ্ট নই।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধের জের ধরে এ ট্রিপল হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ওই সময় পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ফকিরের লাইসেন্স করা একটি বিদেশি শটগান, একটি রিভলবার, একটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, একটি কুড়াল ও তিনটি গুলি জব্দ করে।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের নেতৃত্বে তার লোকজন দৈবজ্ঞহাটি বাজার থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে যুবলীগ নেতা শুকুর শেখকে সেলিমাবাদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে গুলি করে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে ফেলে রাখে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ডাকাতির সময় হত্যার দায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিহিদারের বাড়িতে আক্রমণ করা হয়। হত্যাকারীদের অবস্থান বুঝে আনসার আলী তার ঘরের পাটাতনে পালান। আসামিরা ঘরের চালার টিন কেটে পাটাতনে প্রবেশ করেন। ওখান থেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে, পিটিয়ে টেনে-হিচড়ে তাকে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নিয়ে যান। পরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে শুকুর শেখ ও আনসার আলী দিহিদারকে বোরকা পরিয়ে নির্যাতন করেন। পরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেন। একাধিক গুলি ও মারধরে ঘটনাস্থলে শুকুর শেখ মারা যান ও বাগেরহাট থেকে খুলনা নেয়ার পথে মারা যান আনসার আলী দিহিদার।
ওইদিন আনসার আলী দিহিদারের স্ত্রী মঞ্জু বেগম ও শ্রমিক নেতা বাবলু শেখকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। মারধরে মঞ্জু বেগমের দুই পা ও বুকের হাড় ভেঙে যায়।
দীর্ঘ ২২ মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২০ সালের ৩০ জুলাই মারা যান মঞ্জু বেগম।
২০১৮ সালে আনসার ও শুকুর মৃত্যুর পর ৪ অক্টোবর রাতে মোড়েলগঞ্জ থানায় নিহত শুকুর শেখের ভাই শেখ ফারুক হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৪ জুন পুলিশ ৫৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকির, ইউপি সদস্য আজিম, আল আমিন, সুনীল, শ্যাম ও মোদাচ্ছের, দৈবজ্ঞহাটি ইউপির গ্রাম পুলিশের সদস্য আবুয়াল হোসেন ফকির, আবুল শেখ ও জুলহাস ডাকুয়া।
এরা সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফকিরের অনুসারী, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান ফকির শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৩টি হত্যা মামলাসহ ৭১টি মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ছাত্রাবাসে ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষকের যাবজ্জীবন দণ্ড