প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৮ অক্টোবর) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে বিএনপির কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন সরকারকে উৎখাত করতে চায়। তারা আন্দোলন করার জন্য নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। আমি এটা পরিষ্কার করে দিই, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। কোনো হুমকিতে কাজ হবে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আনোয়ারায় কেইপিজেড মাঠে এক মহাসমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপির নিন্দা করে তিনি বলেন, তাদের দল শুধু মানুষ হত্যা করে, টাকা লুটপাট করে ও দুর্নীতি করে।
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা চুরি করেছেন এবং সে কারণে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পলাতক।’
আরও পড়ুন: কিছু পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসাতে চায়: এএলপিপি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে তারেক রহমান তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বন্ডে সই করে রাজনীতি ছেড়ে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘তিনি কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং সেজন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে হত্যার লক্ষ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোটে কারচুপি করেছিলেন এবং সে কারণে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) এটা মনে রাখা উচিত। তারা ভোট কারচুপিকারী, তারা জনগণের টাকা লুটেরা, তারা খুনি, বিএনপি-জামায়াত মানেই খুনি, খুনি ও সন্ত্রাসী এবং তারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে কেউ দমাতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সবাই সমান ধর্মীয় অধিকার ভোগ করে: প্রধানমন্ত্রী
সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রথম বহুল প্রত্যাশিত আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের টানেল প্রথম। এটি বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন করবে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করবে। এর দু’টি টিউব ও চারটি লেন রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বার্তাটি পড়ে শোনান এবং পরে তিনি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করেন।
এ ছাড়াও তিনি অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে ৫০ টাকার স্মারক নোটও উন্মোচন করেন।
শুরুতেই সুড়ঙ্গের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল সোমবার সকাল ৬টা থেকে যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
টানেলের দুটি টিউব প্রায় ১২ মিটার দূরে অবস্থিত। উভয় টিউব ট্রাফিকের জন্য দুটি লেন বিশিষ্ট এবং আনোয়ারা প্রান্তে অতিরিক্ত ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভার-ব্রিজসহ টানেলের প্রতিটি প্রান্তে একটি ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক অবস্থিত।
সড়ক পরিবহন খাতে দেশের দুটি অঞ্চলকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পর এই টানেল দ্বিতীয় ‘স্বপ্নের প্রকল্প’।
কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের অনুরূপ ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতকে নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী
টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে ১১টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
সমাবেশস্থলে একটি বড় নৌকা আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়। জনসমাবেশে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে।