হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জেরে আদালত অবমাননার মামলায় বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২১ নভেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ তার উপস্থিতিতে সাজার এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, হাবিবুর রহমান দেশের জনগণের কাছে ভুল মেসেজ দিয়েছেন। বিচার বিভাগকে তিনি হেয় করেছেন। এই অবস্থায় আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না। কোর্টকে কবর দেওয়া মানে দেশকে কবর দেওয়া, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আদালতে হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে মাদক মামলায় নারীর ৫ বছর কারাদণ্ড
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। সাজা দিয়ে আদেশ ঘোষণার আগে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ বুধবার দুপুরে তাকে হাইকোর্টে হাজির করে।
টকশোতে হাবিবুর রহমান হাবিব যে বক্তব্য দিয়েছিলেন শুনানির শুরুতে ল্যাপটপের মাধ্যমে তা আদালতকে দেখানো হয়।
এসময় আদালতের প্রশ্নের জবাবে পাবনা জেলা বিএনপির এই সভাপতি আদালতকে বলেন, আমি শপথ করে বলছি আমি এই বক্তব্য দিয়েছি। আমি আদালতের কাছে কিছু কথা বলতে চাই। তখন হাইকোর্ট তাকে কথা বলার অনুমতি দেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন। আমি তার জন্য আমার লিভার প্রয়োজনে দিয়ে দেব। খালেদা জিয়া এমন এক মহীয়শী নেত্রী। তিনি আমার মা। আমার মাকে যদি কেউ কটু কথা বলে সে মারা গেলেও তো তাকে ছাড়ব না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভক্ত। তিনি বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় জাগরণ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, আমার মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমার লিভার, কিডনি, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। আমার ১০০ বছরের সাজা হলেও আমি ভয় পাই না।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার ব্যাখ্যা দিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে তলব করেন হাইকোর্ট।
৬ নভেম্বর তাকে হাজির হতে বলা হয়। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
ওই আদেশ অনুযায়ী ৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হননি তিনি। যে কারণে ৮ নভেম্বরের মধ্যে তার বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে এ তথ্য জানাতে বলা হয়।
৮ নভেম্বরও আদালতের তলবে হাজির না হওয়ায় হাবিবকে হাইকোর্টে হাজির করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে হাজির করতে পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্লবী থানার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ: আপিলে আমৃত্যু সাজা কমিয়ে শামসুল হকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
নাটোরে হত্যা ও ধর্ষণের পৃথক মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড