গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে, আমাদের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতি হিসেবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি আমরা।
রবিবার ওয়াশিংটনের একটি কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর পাঠানো এই চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেনকে বড়দিন ও ২০২২ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার যখন জনগণের দাবি ও নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করেছিল; তখন বাঙালি তার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই আদর্শকে ঘিরে ঢাকা- ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিকাশ ঘটেছে।
এসময় মোমেন আরও বলেন, দেশে ৪৩টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ৫৫০টি জাতীয় দৈনিক এবং হাজার হাজার অনলাইন সংবাদপত্রসহ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চর্চাকারী দেশ। এসব গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে কাজ করছে বলে সরকার মনে করে।
মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, বিস্তৃত ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের ফলে দেশে তথ্যের প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কখনও কখনও যোগাযোগের এই অবাধ সুযোগের কারণে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। এমনকি তা অনেক সময় জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্যও হুমকি হয়ে যায়।
মোমেন আরও জানান, সাইবার হামলা, মানহানি ও অপরাধীদের দ্বারা সাইবার ডোমেনের অপব্যবহার থেকে নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু রয়েছে। আইনটি আমাদের সকলের জন্য নিরাপদ ও প্রয়োজনীয়। এর ফলে সাইবারস্পেস ব্যবহার করা এখন অনেক বেশি নিরাপদ।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ব্লিংকেনকে চিঠি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তবে, এই আইনের কিছু বিধানের বিষয়ে আমাদের অংশীদারদের মতামত সম্পর্কেও আমরা সচেতন। এবিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও এর অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংখ্যালঘু পরিস্থিতি
ড.মোমেন বলেন, আপনারা হয়ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ‘বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ গল্প শুনে ‘আশাহত’ হয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে জানান, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। বর্তমান সরকার সব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষকে স্বাধীনভাবে তাদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা কখনই ধর্ম, জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে মানুষের প্রতি বৈষম্য করি না। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি- বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত অফিসারদের প্রায় সিংহভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। যদিও দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯শতাংশ মানুষ হিন্দু।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষ সরকারের এই ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে অসন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন: এটি রাতারাতি সমাধান হবে না: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কুমিল্লা ও রংপুরের সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু হামলার কথা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ধর্মের নামে এগুলো ধর্মান্ধতা ও উগ্রপন্থার বহিঃপ্রকাশ; দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখবোধ করি।
শ্রম অধিকার
এছাড়াও চিঠিতে ব্লিংকেনকে দেশের শ্রম অধিকারের বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়েছেন ড.মোমেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে দেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশ ২০২১- ২০২৬ (অনুলিপি সংযুক্ত) সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রম খাত সংস্কারের ওপর একটি কর্মমুখী ও সময় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জমা দিয়েছে। বর্তমানে আমরা এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এসব পদক্ষেপ অবশ্যই দেশে শ্রম অধিকারের প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতির গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুন: বাঙালি জাতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে জানে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী