পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চান উল্লেখ করে তিনি ভারত সরকারকে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করলে বাংলাদেশ খুশি হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে তিনি কী বলতে চেয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চাই। আমরা কোনো অস্থিরতা চাই না। আমরা যদি এটি করতে পারি (স্থিতিশীলতা বজায় রাখা) তবে আমাদের সম্পর্কের এই সোনালি অধ্যায় যথার্থ হবে।’
শুক্রবার এর আগে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত করেন।
মোমেন বলেন, তিনি জানিয়েছিলেন (ভারত সরকারকে) বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে এবং তিলকে তাল করে (ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে তুলতে উসকানি দেয়)।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সরকারেরই দায়িত্ব হবে তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না দেয়া। আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে এবং কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা (ক্ষমতায়) আছেন বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে এবং উনি আছেন বলেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে।’
আরও পড়ুন: মিডিয়াকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সবার জন্যই ভালো। বাংলাদেশে সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে।’
মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ক্ষমতায়) থাকলেই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা থাকে এবং স্থিতিশীলতা থাকলেই উন্নয়নের যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন থাকে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তাকে যা বলেছিলেন তিনি ভারত সরকারকে ঠিক তাই জানিয়েছিলেন।
মোমেন বলেন, ‘ভারতে গিয়ে আমি বলেছিলাম আপনার আসামের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম নীতি ও বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের হাব হতে পারে না-এমন ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম ঘোষণার পরে আসাম ও আশপাশের এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নেই। এর ফলে আসামে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হয়েছে এবং এর ফলে তাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে।
মোমেন বলেন, ‘আমি ভারত সরকারকে জানিয়েছি যে আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন শেখ হাসিনা থাকায় সেখানে স্থিতিশীলতা আছে। এতে দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার মোমেন বলেন, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করতে তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু জাতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আমি ভারত সরকারকে বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তাহলেই দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত একটা দেশ হবে।’
হিন্দুদের অন্যতম বড় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোমেন আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে সরাতে কেউ যদি দেশকে অস্থিতিশীলতার পথে নিয়ে যায়, তাহলে তা বিপদের। তাই আমরা সবাই স্থিতিশীলতা চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ভারত সরকারকে বলেছেন আমরা এমনভাবে কাজ করব যাতে আমাদের কোন কারণে কোন উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনও প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় ভারতকে তার সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয় না।
তিনি বলেন, আর আমাদের উন্নতি হচ্ছে বলে ভারতে লোক যায়। ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সোনালী অধ্যায়ের ফলে। সুতরাং আমরা কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কাজ করব না।
সে কারণে মোমেন বলেন, তিনি ভারত সরকারকে শেখ হাসিনাকে সমর্থন অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছেন। কারণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা দুই দেশের জন্য সুফল বয়ে আনে।
আরও পড়ুন: ‘বেহেশতে আছি’ মন্তব্যের ফের ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী