মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য আমাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রভু চাই না। আমরা বন্ধু চাই। বাংলাদেশ কোনো প্রভুর কাছে মাথা নত করবে না। এটি আমাদের জন্য অবমাননাকর। এজন্য আমরা এখানে প্রতিবাদের জন্য দাঁড়িয়েছি।
ভিসা নীতির নামে সংবাদমাধ্যমে মার্কিন চাপের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দ্য ডেইলি স্টেটের জয়েন্ট এডিটর ওবায়দুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
প্রধান অতিথির ভাষণে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য আমাদের দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপের শামিল। বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিরুদ্ধে সাহসিকতা দেখাচ্ছেন। যতক্ষণ তিনি এই সাহসিকতা দেখাবেন- ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তার পাশে আছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেকই হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ মানা হবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা বিরোধীতা করেছিল। মার্কিনীরা বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বর্তমানে ভিসানীতি ও স্যাংশনের নামে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের নিয়ে আমেরিকা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের আজকের এই কর্মসূচিতে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তারাই মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি বলে আমরা বিশ্বাস করি। যারা উপস্থিত না এই সমাবেশ ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছেন, তারা সুযোগ সন্ধানী।
আরও পড়ুন: প্রথম দফায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপে পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
তিনি আরও বলেন, দেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সাংবাদিক সমাজ মেনে নিবে না। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে। আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে প্রতিবাদ করছেন তারই মেয়ে শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সচেতন সাংবাদিক সমাজসহ এদেশের মানুষ মনে নেবে না। এ সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, এটি আমাদের রুটি-রুজির সংগ্রাম, অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন। এসব প্রশ্নে আমাদের কখনও কখনও কলম ছেড়ে রাজপথে নামতে হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্ররিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।
বিশেষ অতিথির ভাষণে বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত গণমাধ্যমের দেশ। সেখানেও সাংবাদিক নির্যাতন হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস’র বক্তব্য তার দেশেরই মুক্ত গণমাধ্যমের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পিটার হাসের বক্তব্য পরোক্ষাভাবে গণমাধ্যমের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন গণমাধ্যমের যে নীতি তার বরখেলাপ।’
আরও পড়ুন: গণমাধ্যম কর্মীরাও ভিসা নীতির মুখোমুখি হতে পারে: হাস
সাংবাদিক নেতা বুলবুল আরও বলেন, ‘পেশার সম্মান রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে ২৭ হাজার ভিসা দিয়ে থাকে। এরমধ্যে ১০ হাজার ভিসা পায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। তাদেরতো ভিসানীতি রয়েছেই, আবার নতুন করে আবার যে ভিসানীতি, তা আমাদের ভয় প্রদর্শন করার জন্যই। আমরনা কোনোভাবেই আমাদের উপর কারো চোখ রাঙানো স্বীকার করবো না।’
তিনি বলেন, ভিসানীতি দিল আমেরিকা। আর তার তালিকা তৈরি করে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধ প্রশিক্ষক। আমার উদ্বেগ হলো গণমাধ্যমের উপর ভিসানীতির প্রয়োগ বিষয়ে। সাংবাদিকদের শত্রু হলো দুইটি- একটি ভয় এবং অন্যটি লোভ। প্রকৃত ভদ্র সাংবাদিকরা কখনো এসব রক্তচক্ষুকে ভয় করে না।
এম শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র মহাসচিব শাহীন বাবু, সাংবাদিক নেতা লায়েক উজ্জমান, সিনিয়র সাংবাদিক আজমল হক হেলাল, আবু সাঈদ, সোহেল আমহেদ সোহেল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক, রাজু আহমেদ, আল মাসুদ নয়ন, গোলাম মুজতবা ধ্রুব প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ভিসা নীতি নিয়ে এডিটরস কাউন্সিলের উদ্বেগ, ব্যাখ্যা দিলেন রাষ্ট্রদূত হাস