১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের আনুগত্য নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'মির্জা আসলাম বেগ (যিনি সে সময় বাংলাদেশে সেনা কর্মকর্তা ছিলেন) মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে একটি চিঠি লিখেছিলেন।’
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার(২৬ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, জিয়া বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন নাকি পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধ করেছেন, এই প্রশ্ন উঠেছিল।
চিঠির বরাতে তিনি দাবি করেন, মির্জা আসলাম বেগ আরও বলেছেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও সন্তানরা ঢাকা সেনানিবাসে ভালো আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রশ্ন হচ্ছে, ওই ব্যক্তি যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন, তাহলে কেন পাকিস্তানিরা সেনানিবাসে ওই ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানদের দেখভাল করল এবং চাকরিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে চিঠি লিখল।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধ হলেও জিয়ার নেতৃত্বাধীন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে সেখানে।’
তিনি আরও বলেন, যে কোন অভিযানের সময় জিয়াউর রহমান নিজেকে নিরাপদ স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিতেন এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটত।
তিনি বলেন, 'তিনি (জিয়াউর রহমান) সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ইউএই নেতাদের অভিনন্দন
তিনি উল্লেখ করেন, যে কোনো যুদ্ধে সফল অভিযানের অর্থ হলো কম হতাহতের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো।
জিয়া তা করতে পারেননি, তাই আসলাম বেগ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জেনারেল বেগ ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯১ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক নিহত হওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
২৫ মার্চ রাতে (২৬ মার্চের প্রথম দিকে) স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা তারবিহীনভাবে প্রচার করা হয়েছিল, কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘বিকৃত ইতিহাসে বলা হয়, একজন মেজর ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। এভাবে একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে না। এটা যদি করা যেত তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।’
তিনি বলেন, এখন বিএনপি নেতারা গণতন্ত্র খুঁজছেন এবং বিএনপির একজন নেতা দাবি করেছেন যে ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। যদি সত্যি হয় তাহলে কে লড়াই করল আর কে জয় এনে দিল।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই সরকার গঠনের পর তারা মেহেরপুরে শপথ নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বেতনভোগী ব্যক্তি হিসেবে জিয়াউর রহমান ওই সরকারের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (বিএনপি নেতাদের) ভুলে গেলে চলবে না। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এই অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা সেটাও ভুলে যায়।’
ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে বিএনপির এক নেতার শাল পোড়ানোর কাজকে উপহাস করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বিএনপি নেতাদের স্ত্রীদের কাছে থাকা ভারতীয় শাড়ি তল্লাশি করে পুড়িয়ে ফেলতে এবং রান্নাঘরে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার জন্য জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণ যাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে জিততে পারেনি, তারা এখন গণতন্ত্র খুঁজছে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি এসএম মান্নান কচি।
সভাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী