টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এর আগে দেওয়া জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে এই আদেশ দেন।
একই সঙ্গে হাইকোর্ট তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনতাকিমকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রমের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন— ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সোরোয়ার হোসেন বাপ্পী।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সোরোয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করেন তাহলে তাকে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ অর্থাৎ গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাজা বহালের রায় প্রকাশ, আমান দম্পতিকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি। কারাগারে আছেন কয়েক বছর ধরে। গত আগস্ট মাসে এ মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়েছিল দেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল আপিল বিভাগ।
কিন্তু এই নির্দেশনা গোপন রেখে হাইকোর্টে চাওয়া হয় ওই আসামির জামিন। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এ জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর গত বুধবার মুক্তি পান তিনি। এদিকে এ আসামির মুক্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলে।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মামলাটি টাঙ্গাইল জেলার হলেও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ঢাকার জেলার নাম উল্লেখ করা রয়েছে। শুধু জেলার নাম ভুলই নয়, আসামির নামও ভুল লেখা হয়েছে। ছিল না কোনো টেন্ডার নম্বর।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামিন চাইতে পারেন যেকোনো আসামি। কারণ এটা আসামির অধিকার। জামিন পেতেও পারেন। তবে এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে জামিন হাসিল করাটা কতটা ন্যায়সঙ্গত। এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। সে অনুযায়ী বিষয়টির উপর সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে গত ২০ নভেম্বর মুক্তিকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ রবিবার প্রত্যাহার করে নেন। পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।’
প্রসঙ্গত, সহিদুর রহমান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়।
এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এই মামলায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
পরে পুলিশ এই চারজনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বর্তমানে এই মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মসমর্পণ