উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানির চাপে পৃথক দুটি স্থানে রিং বাঁধ ও কাঁচাসড়ক ভেঙে যাওয়ায় ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার সকালের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাজিপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, শনিবার রাতে পানির চাপে শাহজাদপুর উপজেলার বড়াল নদীর রাউতারা রিং বাঁধ (ডুবন্ত) ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাটি এলাকার বহু পরিবার। রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদরের বিয়ারাঘাট এলাকায় নির্মিত একটি কাঁচা সড়ক পানির চাপে ভেঙে ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে, নিচু এলাকা প্লাবিত
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর বলেন, প্রায় ২ মাস আগে বিয়ারাঘাট থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। রবিবার সকালে পানির চাপে এ সড়কটি ভেঙ ভাটি এলাকার বিয়ারাঘাট, পাইকপাড়া, ঘোনাপাড়া ও রামগাঁতী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বহু পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া কয়েকদিন ধরে উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে যমুনার তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের বাদাম ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে এবং অনেক এলাকার কাঁচা সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
যমুনায় পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় বিশেষ করে নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় অনেক পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলছেন, যমুনা নদীতে ২২ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এরপর হয়তো কমতে পারে। তবে বন্যার আশঙ্কা করা হলেও এখনো তেমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
তিনি জানান, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরসহ ভাঙনকবলিত স্থানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।