কারাবন্দি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি অসুস্থ আমিনুর রহমানকে চিকিৎসা দেওয়া অবস্থায় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ শেষে সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রিট আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপিপন্থী আাইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
আরও পড়ুন: সাধারণত জঘন্য অপরাধে আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়: হাইকোর্ট
তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এর আগে রবিবার আমিনুর রহমানের স্ত্রী রাহাত আরা খানের পক্ষে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রিট আবেদনটি দাখিল করেন। রিটে ওই যুবদল নেতার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত ২৯ নভেম্বর ‘ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে যুবদল নেতাকে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী।
এসময় স্বপ্রণোদিত আদেশ চাইলে আদেশ দেননি হাইকোর্ট। আদালত বিষয়টি রিট আবেদন হিসেবে দায়ের করতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার রিটটি করা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের মেঝেতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক ব্যক্তি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দুই পা ভাঁজ করে শুয়ে আছেন। ডান্ডাবেড়ি থাকায় দুই পা সোজা করতে পারছেন না। এক হাতে ঝুলছে হাতকড়া। অন্য হাতে ইনজেকশনের ক্যানোলা। দুই পায়ের মাঝখানে ঝুলছে ক্যাথেটার। রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব সেখানে জমা হচ্ছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে নিয়ে এসে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে। তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে, যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাইকোর্ট এলাকায় বাসে আগুন
ছবির ওই ব্যক্তির নাম আমিনুর রহমান মধু। তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। এ ছাড়া তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।
অসুস্থ আমিনুরের পরিপূর্ণ চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের। আর কারা পুলিশের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে মর্মাহত তার পরিবার ও স্বজনরা। এরূপ আচরণ সমীচীন নয় বলে অভিমত জানান আইনজীবীরা।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে দুটি বাস থেকে ককটেল, লাঠি ও পেট্রোল জব্দের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৮৭ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
ওই মামলায় আসামি যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু। এরপর হরতাল–অবরোধে নাশকতার আরও দুই মামলার আসামি হন তিনি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে যান। কিন্তু ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।