রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।এর আগে হাইকোর্টও একই রায় দিয়েছিলেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড.তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো.জাহাঙ্গীর আলম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল থাকা দুই আসামি হচ্ছেন- মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা: আদালতের নির্দেশে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ
এর আগে ১৬ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল দিন রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, শুধুমাত্র প্রমোশনের জন্য একজন শিক্ষককে হত্যা একটি জঘন্যতম ঘটনা। এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিরা এখন চাইলে এ রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। তারপর রিভিউ খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করবেন। সেটিও নাকোচ হলে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
আসামি পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান, ব্যারিস্টার এহসান ই সিদ্দিকী। পরে এহসান এ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আসামিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করা হবে।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ বছর ধরে এর জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হবো।
হত্যাকাণ্ডের সময়কার ঘটনা উল্লেখ করে সুলতানা আহমেদ বলেন, খুনি আমাদের সঙ্গে যা করেছে, তা আমাদের চিন্তার বাইরে। সে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মস্তিস্কে আমার অনুপস্থিতিতে আমার বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আমার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা তার সাজা কার্যকর হোক।
এ রায়ে আদালতে উপস্থিত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী ও মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের লাশ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দু’জনকে বেকসুর খালাস দেন।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: এএসপি আনিস হত্যা: ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা