কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। তবে এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বছরের শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত জেলায় ১২ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা হচ্ছে ১১ হাজার ৬৫৮ জন ও স্থানীয় ৫৮৮ জন। এই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এর মধ্যে ২২ জন রোহিঙ্গা ও একজন স্থানীয়। মৃত ২৩ জনের মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানীয় একজনসহ মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের, আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৪ জন। আর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তির রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ খুনের ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোমিনুর রহমান জানান, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫২ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ৫২৬ জন ও রোহিঙ্গা ১৮৬ জন। ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ১১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১০ জনই রোহিঙ্গা।
গত মাসে তানভীর আহমদ (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডা. মো. মোমিনুর রহমান জানান, বর্ষাকালে ভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের সংস্কার কাজসহ নালা নর্দমায় পানি জমে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার জন্ম হয়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলায় হেড মাঝি নিহত
অপরদিকে কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় ভ্রমণে আসা অনেক পর্যটক আবাসিক হোটেলে মশারী ব্যবহার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবানুবহন করে কোনো ব্যক্তি কক্সবাজার এসে রাত্রি যাপন করলে তাকে কোনো মশা কামড়ানোর পর অন্য ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। তাই মশারী ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৪ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন স্থানীয় এক এবং রোহিঙ্গা ২২ জনসহ মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ডেঙ্গু ভয়াবহতা দেখা দেয়ায় নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের অন জব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত আরডিটি কিট সরবরাহ রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী, ভলান্টিয়ার, রোহিঙ্গা মাঝিসহ নানাভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এডিস মশা যাতে প্রজনন করতে না পারে সে জন্য ক্যাম্পে খাল, ডোবা, নালা, নর্দমা পরিস্কার করা হচ্ছে।