প্রায় দেড় যুগ আগে সাতক্ষীরায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারসহ সাত জনকে চার মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে এই সময়ের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামিদের করা আপিল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন- গোলাস রসুল, আব্দুস সামাদ, আব্দুস সাত্তার, জহিরুল ইসলাম, রাকিব, শাহাবুদ্দিন ও মনিরুল ইসলাম। আদালত বাকি ১১ আসামির জামিনের আদেশের জন্য আগামী রবিবার (৩০ মে) দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে জামিন আবেদনকারীরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট গাজী মহসীন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শাহীন মৃধা।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর জানান, এ মামলায় সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৫০জনকে সাজা দেয়। সাজাপ্রাপ্তরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে জামিন চেয়েছেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে দিলে এর বিরুদ্ধে ১৮ জন হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: ১৪ আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে
জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ পাওয়া যায় সাতক্ষীরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
হামলায় শেখ হাসিনাসহ তার গাড়িবহরে থাকা লোকজন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ অন্তত এক ডজন লোক আহত হন। ওই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদল সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৭০-৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিভিন্ন আদালত ঘুরে হাইকোর্টের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উলেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে পেনাল কোর্ট, অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক তিনটি অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম।
আরও পড়ুন: কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন পেনাল কোর্টের মামলাটি ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর এবং সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন অস্ত্র আইনে ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দুটির কার্যক্রম যথাক্রমে ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগস্ট আসামীপক্ষ হাইকোর্টে স্থগিত করেন। গতবছর ৮ অক্টোবর ওই রুল খারিজ করে রায় দেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাকিবুর।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এরপর বিচার শেষে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়ে রায় দেন। এরপর আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন।