বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাতে বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশে জাপানি স্থপতি কর্তৃক শিশু গ্রন্থাগার স্থাপন, বাংলাদেশ-জাপান যৌথ চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন ও বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউজ নির্মাণে জাপানের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ হয়।
সাক্ষাতে জাপানের রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ও সংগ্রহশালা এবং একটি জনপ্রিয় সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। প্রতিদিন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, গবেষক, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণ এটি পরিদর্শন করে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে জাপান দূতাবাস জাপানের প্রখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো এর মনোরম স্থাপত্য নকশায় বাংলাদেশের শিশুদের জন্য জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে একটি নান্দনিক শিশু গ্রন্থাগার স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া নাফিজকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের যৌথ সমীক্ষায় জাদুঘর প্রাঙ্গণকে শিশু গ্রন্থাগার স্থাপনের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্থান হিসাবে নির্ধারণ করে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ স্থানটির বিষয়ে সম্মতি দেয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করে।
ইওয়ামা কিমিনোরি আরও জানান, প্রস্তাবিত শিশু গ্রন্থাগার স্থাপন এবং এর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও জাপানের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের খসড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় জাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেন।
শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরের সময়ে সমঝোতা স্মারকটি সই হতে পারে।’
কে এম খালিদ বলেন, ‘শিশু গ্রন্থাগারটি নির্মিত হলে একদিকে যেমন আমাদের শিশুদের পাঠাভ্যাস গড়ে ওঠবে, অন্যদিকে এটি তাদের জাপানের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে।’
রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ।’
এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে দিতে তিনি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত এসময় বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দুদেশের চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে যৌথ চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী পদ্মা সেতুর নিকট সিডনি অপেরা হাউজের আদলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু অপেরা হাউজ’ নির্মাণে জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, জাপান বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগি। জাইকার মাধ্যমে বিগত কয়েক দশক ধরে জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অপেরা হাউজ নির্মাণে বিনিয়োগ একটু কঠিন।
তবে, এটি বাংলাদেশের অগ্রাধিকার প্রকল্প হলে বাংলাদেশকে অফিসিয়াল প্রস্তাব প্রেরণ করতে হবে। যেহেতু, এটি বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেজন্য এ বিষয়ে জাপান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া একান্ত আবশ্যক। রাষ্ট্রদূত পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমেও এটি বাস্তবায়িত হতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেন।
তিনি এসময় প্রতিমন্ত্রীকে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সাক্ষাৎকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সাংস্কৃতিক বিনিময়) কাজী নুরুল ইসলাম, উপসচিব (সাংস্কৃতিক চুক্তি) আয়েশা সিদ্দিকা, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে শেষবারের মতো বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী